জগন্নাথপুরে স্পেনের কথা বলে লিবিয়ায় পাচার, সিলেটে মামলা

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় এক যুবককে স্পেনে পাঠানোর আশ্বাস দিয়ে লিবিয়ায় পাচারের অভিযোগ উঠেছে মানব পাচারকারী একটি চক্রের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে গতকাল বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ১২ জনের বিরুদ্ধে সিলেট মহানগরের কোতোয়ালি থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীর বাবা আবুল হক।

সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হক মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ভুক্তভোগী আলী হোসেন (২৮) উপজেলার শ্রীধরপাশা গ্রামের আবুল হকের (৫৫) ছেলে।

মামলার প্রধান আসামি হচ্ছেন উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ফয়সল মিয়া (৪৫)। তিনি সিলেট নগরের আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা। অন্যান্য আসামিরা হলেন ফয়সলের ভাই মকবুল মিয়া (৫০), জগন্নাথপুরের শ্রীধরপাশা গ্রামের হাছান নূর (৪০), সাইফুল ইসলাম (২৮), ছালাতুর রহমান (৩৫), সিরাজুল ইসলাম (৪৫) ও সামসুল ইসলাম (৪৫), উপজেলার আসামপুর গ্রামের এনাম (৩৬), সিলেট নগরের তপোবন এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম (৪০), দিরাই উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের সালেহ (৪০), জগন্নাথপুরের পাড়ারগাঁও গ্রামের শাহীন (৩৫) ও শ্রীধরপাশা গ্রামের জিলু মিয়া (৪২)।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মানব পাচারকারী দলের সক্রিয় সদস্য ফয়সল মিয়া ও মকবুল মিয়া সিলেট শহরে বসবাস করে বিদেশে লোক পাচার করে থাকেন। অন্যান্য আসামিরা তাদের দেশ-বিদেশের প্রতিনিধি (এজেন্ট)। আসামিরা লোক সংগ্রহ করে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় পাঠিয়ে সেখানে জিম্মি করে জোর করে টাকা আদায় করে থাকে। জিম্মিরা টাকা না দিলে তাদের অসহনীয় নির্যাতন ও হত্যার স্বীকার হতে হয় বলেও মামলার আজাহারে উল্লেখ করা হয়।

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালের ১৫ আগস্ট ছেলে আলী হোসেনকে স্পেন পাঠানোর জন্য ফয়সলের সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার একটি মৌখিক চুক্তি করেন তার পিতা আবুল হক। পরে একই বছরের ২৯ আগস্ট, ২০ নভেম্বর ও ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি তিন দফায় চুক্তির টাকাও পরিশোধ করেন তিনি। তারপরও তার ছেলেকে স্পেনে না পাঠিয়ে কৌশলে লিবিয়ায় পাঠায় আসামিরা। সেখানে থাকা পাচার চক্রের সদস্য তাঁর ছেলের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাতো। আরও টাকা না পেলে তাকে হত্যার হুমকি দিত বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এরপর থেকেই আলী হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে তাঁর পরিবারের সদস্যরা আসামিদের চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু আরও টাকা না দিলে আলী হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারবেন না বলে জানায় আসামিরা। এর প্রেক্ষিতেবাদীর পরিবারের কাছ থেকে নানা সময়ে আরও প্রায় ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।

এর আগে, গত ২৭ নভেম্বর সিলেটের মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে ছেলে আলী হোসেনকে পাচারের অভিযোগে একটি নালিশি দরখাস্ত করেছিলেন আবুল হক। পরে আদালতের বিচারক মো. সাইফুর রহমান দরখাস্তটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করার জন্য কোতোয়ালি থানাকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি আগামী ২ মার্চের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানাকে তদন্ত প্রতিবেদন জমার দেওয়ার নির্দেশও দেন আদালত।

এ ব্যাপারে মামলার বাদী আবুল হক বলেন, ‘ ছেলের জন্য প্রায় ২৫ লাখ টাকা আসামিদের দিয়েছি। এরপরও ছেলের স্বার্থের বিষয়টি চিন্তা করে এত দিন মামলা করিনি। তবে সাড়ে তিন মাস ধরে ছেলের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। এতে আমরা পরিবারের সদস্যরা শঙ্কায় আছি। এ অবস্থায় মামলা করতে বাধ্য হই।’

সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হক মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে মামলাটি নেওয়া হয়েছে।’

মামলার বিষয়ে জানতে প্রধান আসামি ফয়সল মিয়ার মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করলেও সংযোগ বিচ্ছিন্ন পাওয়া গেছে। এছাড়া দ্বিতীয় আসামির মুঠোফোনে কল করলেও তিনি কল ধরেননি। তাই তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।