নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন আজ

আজ বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র, জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কুমুদিনী হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই সাহিত্যিক, যিনি আজও কোটি মানুষের হৃদয়ে বসবাস করেন। তাঁর সাহিত্য, সৃজনশীলতা এবং লেখনী শুধু বাংলা সাহিত্যের শীর্ষস্থানীয় কৃতিত্বই নয়, তাঁর সৃষ্টি ও উপস্থিতি চিরকালীন প্রভাব বিস্তার করেছে আমাদের জীবনে।

হুমায়ূন আহমেদ তাঁর সাহিত্যিক জীবন শুরু করেন ১৯৭০ সালে, প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকের’ মাধ্যমে। তবে তিনি প্রকৃত জনপ্রিয়তা পান ‘মধ্যাহ্ন’ (১৯৭৭) উপন্যাসের মাধ্যমে। হুমায়ূন আহমেদ নামটি আজ আর শুধু একজন লেখকের পরিচয় নয়, এটি হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি ব্র্যান্ড। তাঁর উপন্যাস, কাহিনী, চরিত্র এবং বিশেষ করে তাঁর অমর সৃষ্টি ‘হিমু’ ও ‘মিসির আলি’—এই দুটি চরিত্র বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে।
লেখালেখির পাশাপাশি হুমায়ূন আহমেদ নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণেও অনন্য অবদান রেখেছেন। তার পরিচালনায় ‘শুভ সূচনা’ (১৯৮৬) এবং ‘আগুনের পরশমণি’ (১৯৯৪) চলচ্চিত্র দুটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাঁর নাটক যেমন টেলিভিশন দর্শকদের মাঝে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, তেমনি তাঁর চলচ্চিত্রও শিল্পীসমাজে প্রশংসিত হয়েছে।

সত্তর দশকের শেষভাগে থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি তিনি ছিলেন বাংলা গল্প-উপন্যাসের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কারিগর। এই কালপর্বে তাঁর গল্প-উপন্যাসের জনপ্রিয়তা ছিল তুলনাহীন। তাঁর সৃষ্ট হিমু ও মিসির আলি চরিত্রগুলো বাংলাদেশের যুবকশ্রেণিকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে। তাঁর অন্যতম উপন্যাস হলো নন্দিত নরকে, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, শঙ্খনীল কারাগার, মাতাল হাওয়া ইত্যাদি।

হুমায়ূন আহমেদের লেখনীর মধ্যে তার জীবনের অসাধারণ অনুভূতির প্রতিফলন ছিল। তাঁর মতো সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব ছিল, যার মন এবং মস্তিষ্ক যেন ছিল একটি নিত্য নতুন আবিষ্কারের খনি। তিনি যে সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন, তাতে যেন জীবনের সমস্ত জটিলতা, সুখ-দুঃখ, মানবিক সম্পর্ক, এবং আদর্শ—সবকিছুই ছিল অমৃতরসের মতো। বিশেষ করে তাঁর গল্পের মধ্যে কমেডি, ট্র্যাজেডি এবং রোমান্স একসাথে মিলেমিশে এমন এক জাদু সৃষ্টি করেছিল, যা পাঠক-দর্শকদের মন ছুঁয়ে যেত।

হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য স্রোত যেমন আজও চলছে, তেমনি তাঁর দর্শন, তাঁর জীবনদর্শন, তাঁর ভাবনা, এবং চিন্তা-চেতনা আজও প্রেরণা হিসেবে আমাদের সামনে ম্লান হয়নি। তাঁর উত্তরাধিকার শুধুমাত্র সাহিত্য পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়, বরং তিনি যে দর্শনের প্রতিফলন সৃষ্টি করেছিলেন, তা অমর হয়ে থাকবে। আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে তাঁর বইগুলো এমন এক রত্ন, যেগুলি কখনও পুরনো হবে না।

আজ তাঁর জন্মদিনে, আমরা স্মরণ করছি সেই মহান ব্যক্তিত্বকে, যিনি বাংলা সাহিত্যের আকাশে এক নতুন নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করেছেন। হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টি আজও আমাদের প্রেরণা দেয়, তাঁর চরিত্রগুলি আমাদের চোখে চোখে ভাসে, এবং তাঁর লেখাগুলি যা কখনও পুরনো হবে না।

শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ!