শান্তিগঞ্জে ঘুমন্ত অবস্থায় ছুরিকাঘাতে তিন সন্তানের জনক খুন!

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ঘুমন্ত অবস্থায় ছুরিকাঘাতে দিলোয়ার হোসেন (৩৮) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত দিলোয়ার উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের কামরূপদলংয়ের কান্দিগাঁও গ্রামের লিম্বর আলীর ছেলে।

শুক্রবার দিবাগত রাত শেষের দিকে সদরপুর গ্রামের মৃত আয়ফর মেম্বারের ছেলে মোস্তাক আলী ওরফে মোস্তাই মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত দিলোয়ার তিন ছেলেমেয়ে ও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে এই বাড়িতে বসবাস করতেন।

স্থানীয়দের ধারণা, নিহত দিলোয়ার হোসেনের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী তেরা বানুর দ্বিতীয় স্বামী জাহাঙ্গীর আলম চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকতে পারেন। একই সন্দেহ পোষণ করছেন তেরা বানু নিজেও। নিহত দিলোয়ারের মা ও তিন সন্তান জাহাঙ্গীর আলমের জড়িত থাকার সরাসরি অভিযোগ জানিয়েছেন। জাহাঙ্গীর একই উপজেলার শিমুলবাঁক ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা, মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব আলীর ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৬ বছর আগে দুই মেয়ে ও এক ছেলেসহ তিন সন্তানকে রেখে প্রেমের টানে জাহাঙ্গীর আলমের হাত ধরে ঘর ছাড়েন দিলোয়ারের স্ত্রী তেরা বাবু। পরে জাহাঙ্গীরের সাথে সংসার শুরু করেন তিনি। এর কিছুদিন পর প্রবাসে চলে যান তেরা বানু। প্রবাস থেকে ফেরার পর সন্তানদের টানে ৬ বছর পর আবারও প্রথম স্বামী দিলোয়ার হোসেনের কাছে ফেরার আগ্রহ দেখান তিনি। বিষয়টি মিমাংসা ও পুনরায় বিয়ে করিয়ে দেওয়ার জন্য সদরপুর ও কামরুপদলং-এর মুরব্বিদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তেরা বানু। রবিবার তাদের দ্বিতীয়বার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। এর আগেই রাতের আঁধারে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে কে বা কারা দিলোয়ার হোসেনের মাথায় এলোপাতাড়ি একাধিক ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। সপ্তাহ খানেক আগে জাহাঙ্গীর আলমের সংসার ছেড়ে আবারও প্রথম স্বামী দিলোয়ারের সংসারে আসার জন্য সদরপুর গ্রামে অবস্থান করছিলেন তেরা বানু। মুরুব্বিরা বলেছিলেন রবিবার জাহাঙ্গীরের সাথে ডিভোর্স ও দিলোয়ারের সাথে আবারো বিয়ে দেওয়া হবে। তাই সন্তানদের নিয়ে তেরা বানু আলাদা একটি ঘরে বসত করছিলেন এই ক’দিন। গতকাল (শনিবার) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে স্বামীকে পান্তাভাত খাওয়াতে এসে দরজা খোলা এবং দিলোয়ারের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে সবাইকে চিৎকার করে ডাকেন তেরা বানু।

ঘটনার খবর পেয়ে ফোর্সসহ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যান শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম আলী। মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন থানা পুলিশ। ওসি আকরাম আলী বলেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। কে বা কারা ঘটনার সাথে জড়িত তা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। খুব দ্রুত ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন হবে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আনছার উদ্দিনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা জানান, এ রকম ন্যাক্কারজনক ঘটনা শান্তিগঞ্জ উপজেলার এর আগে কখনোই ঘটেনি। যে ব্যক্তি মারা গেছেন তিনি খুবই নিরিহ নির্বিবাদি লোক ছিলেন। সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।