জগন্নাথপুরে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে পেটালেন স্বামী

মামলার প্রধান আসামি অভিযুক্ত শিক্ষক দিপক দাশ

জগন্নাথপুরে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে দিপক দাশ নামে এক সহকারী স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী নারী শিক্ষিকা জগন্নাথপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তবে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এখন পর্যন্ত মামলার প্রধান আসামি অভিযুক্ত শিক্ষক দিপক দাশকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত দিপক দাশ সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রসুলগঞ্জ গ্রামের মৃত যোগেশ দাশের ছেলে। তিনি কছুরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। গত ৩/৫/২০২২ ইং ভুক্তভোগী সহকারী শিক্ষিকার সঙ্গে দিপক দাশের সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের মেঘারকান্দির গ্রামের হিরা দাশের মেয়ের সাথে বিবাহ হয়। আসবাবপত্রসহ স্বর্ণালঙ্কার যৌতুক বিয়েতে প্রদান করা হয়। বিয়ের পর থেকে শিক্ষক দিপক দাশ প্রতিনিয়ত যৌতুকের টাকার জন্য মেয়েকে নির্যাতন করে আসছেন।

বিয়ের পর থেকেই দিপক দাশ নগদ ৬ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে আসছেন। টাকার জন্য প্রায়ই তার স্ত্রীকে মারধর ও নির্যাতন করতেন। এক পর্যায়ে নির্যাতিত শিক্ষিকার পরিবার মেয়ের ভবিষ্যৎ জীবনের চিন্তা করে দুই কিস্তিতে নগদ ছয় লক্ষ টাকা প্রদান করেন। টাকা দেওয়ার পরে কিছুদিন পর তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হলে তাকে সন্তান না নেওয়ার জন চাপ প্রয়োগ করে দিপক দাশ। কিছুদিন পর আবারো দুই লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করে তার স্ত্রীকে তিনি চাপ প্রয়োগ করেন। এর পাশাপাশি স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন।

গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে অভিযুক্ত দিপক দাশ স্ত্রীকে পরিবারের অন্য সদস্যদের প্ররোচনায় মারপিট শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর পেটে লাথি মারেন। এতে তার স্ত্রীর প্রচন্ড ব্যাথা ও রক্তক্ষরণ হলে তাকে কোন চিকিৎসা প্রদান করেনি অভিযুক্ত দিপক দাশের পরিবার। নির্যাতনের শিকার তার স্ত্রীর স্বাস্থ্যের অতিরিক্ত অবনতি হওয়ার ফলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জগন্নাথপুরে নিয়ে যায় অভিযুক্ত দিপক দাশ। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার ঐ শিক্ষিকার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়েছে বলে জানান।

পরে স্ত্রী মোবাইল ফোনে তার পরিবারকে ঘটনা জানানোর পর জগন্নাথপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা নেওয়া হয়। সহকারী শিক্ষিকা বলেন, ‘তিনি ( দিপক দাশ) ও তার মা সহ প্রায়ই আমাকে মারধর করতেন। রান্নায় লবণ কম হলেও পরিবারের সকলের প্ররোচনায় তিনি আমাকে মারধর করেন।

নির্যাতিতা মহিলা বলেন, ’ঘটনার দিন ২ লাখ টাকার জন্য চাপ দিলে আমাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দিপক দাশ আমার গলা চেপে ধরেন, মুখে কাপড় বেঁধে মারপিট করেন। আমার শরীরে বিভিন্ন স্হানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’

উক্ত বিষয়ে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক দিপক দাশের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ঐ শিক্ষিকার মা (বুলি রানী দাশ) বলেন, ‘বিয়ে দেয়ার পর থেকে অনেক অত্যাচার করেছে। আমাদের কাছে ৬ লক্ষ টাকা যৌতুক চায়, দুই কিস্তিতে ৬ লক্ষ টাকা যৌতুক দিছি। তাও আমি জানতাম না। মেয়ে ফোন দিছে, ছবি দিছে। আমি এই অবিচারের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’

তিনি আরো বলেন, ‘একজন শিক্ষক যদি এমন কাজ করে, তাহলে জাতি তার কাছ থেকে কী শিখবে? মধ্যযুগীয় কায়দায় টানা সাতদিন আটকে রেখে এমন নির্যাতনের চিত্র আমরা আগে দেখিনি। আমরা এর বিচার চাই। এমন বিচার চাই যাতে এ কাজ আর কেউ করার আগে যেন শতবার চিন্তা করে।’

উক্ত বিষয়ে দিপক দাশের কর্মস্থল কচুরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব ঈসমাইল উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ‘দিপক দাশ দুই দিনের ছুটি নিয়েছেন। এই বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবেন।’

এই বিষয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার জনাব মাহবুবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি মামলার কাগজ পেয়েছি। আমি জেলা শিক্ষা অফিসার মহোদয়ের কাছে বিষয়টি জানাবো। তিনি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিবেন।’

জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় জগন্নাথপুর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় সহকারী শিক্ষক দিপক দাশ সহ ৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনা শোনার পর থেকেই আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’