সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী এলাকার শাহ্ আরেফিন আস্তানায় গান-বাজনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দুর্বৃত্তরা আস্তানা এলাকায় হামলা করতে পারে, এই আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, ‘আস্তানা এলাকায় সকল প্রকার গান-বাজনা, মাদক সেবন, সাপ্তাহিক ওরসসহ অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হল।’
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জনসাধারণের সামনে এলে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তকে অনেকে স্বাগত জানাচ্ছেন। তবে সংস্কৃতিপ্রেমীরা, আস্তানা এলাকায় মাদকসেবন ও অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে একমত হলেও গান-বাজনা ও জিকির-আজকার নিষিদ্ধ করার বিষয়টিতে আপত্তি জানিয়েছেন।
শাহ্ আরেফিন আস্তানায় দীর্ঘ ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে গান বাজনার সঙ্গে জড়িত আছেন বাউল জাকির দেওয়ান। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘গান-বাজনার মধ্যে অসামাজিক কিছু দেখছি না। এসব আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির অংশ। মনের টানে আমার মতো অনেক ফকির-সন্ন্যাসী-বাউল এখানে গান বাজনা করতে আসেন। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত আমরা হতাশ।’
স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মী আবুল হোসেন বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন মাজার-আস্তানায় বাউল ফকিররা মুর্শিদি ভাবধারায় যেভাবে গান-বাজনা করে থাকেন এটা ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। তবে এসবের আড়ালে মাদকসেবন ও অশ্লীল নৃত্যের বিপক্ষে আমরা।’
যোগাযোগ করা হলে শাহ্ আরেফিন আস্তানা কমিটির সদস্য সচিব আলম সাব্বির বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন মাজার ও আস্তানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। যেকারণে আস্তানা কর্তৃপক্ষ সতর্কতা অবলম্বনের অংশ হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে ওলী-আউলিয়াদের মাজার-আস্তানায় আল্লাহ ও রাসূলের শানে জিকির-আসগার হচ্ছে। বাউল-ফকিররা গান-বাজনা করছেন। সবই দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ। তবে গান-বাজনার আড়ালে মাদকসেবনসহ যেকোনো অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আমরা আগেও সোচ্চার ছিলাম, এখনও আছি।’
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভীন বলেন, ‘আজ রিলিজ নিয়ে এখান থেকে চলে যাচ্ছি আমি। নতুন ইউএনও যোগদান করলে বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন।’