টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রীর পতনের পর নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর বিষয়টি আলোচনা এসেছে।
১২ বছর আগে শেখ হাসিনার আমলে নিখোঁজ হওয়া এই বিএনপি নেতার মুক্তির দাবি জানিয়েছে তার পরিবার ও সিলেট বিএনপি। অবিলম্বে অক্ষত অবস্থায় ইলিয়াস আলীকে ফেরত চান তাঁরা।
এর আগে মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সকালে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ দুই নেতার ‘গুম’ হওয়া দুই ছেলে ফিরে এসেছেন পরিবারের মাঝে। জামায়াতের সাবেক দুই নেতার ছেলের মুক্তির পর এবার আলোচনায় এসেছেন নিখোঁজ হওয়ায় বিএনপির প্রভাবশালী নেতা, সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী।
বিএনপি ও তাঁর পরিবারের দাবি, ইলিয়াস কথিত বন্দিশালা ‘আয়না ঘরেই’ থাকতে পারেন। তাকে এখনই মুক্তি দিতে হবে।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইলিয়াস আলীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। তবে বিএনপির কোনো দায়িত্বশীল নেতা এর সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেননি।
এর আগে মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) ৮ বছর পর কথিত বন্দিশালা ‘আয়না ঘর’থেকে মুক্ত হয়েছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (বরখাস্ত) আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আহমাদ বিন কাসেম (আরমান)। গতকাল ভোরে তারা নিজ নিজ বাসায় ফেরেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও আহমাদ বিন কাসেমের মুক্ত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে গাড়িতে করে নিজের বনানীর বাসা থেকে বের হন ইলিয়াস আলী। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন গাড়িচালক আনসার আলী। রাত ১২টার পর মহাখালী থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ইলিয়াস আলীর প্রাইভেট কারটি উদ্ধার করে পুলিশ। তখন গাড়িতে ছিলেন না ইলিয়াস ও তার গাড়িচালক। বনানী থানার তৎকালীন এসআই সাইদুর রহমান সে সময় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মধ্যরাতে ইলিয়াস আলীর প্রাইভেট কারটি মহাখালী সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। গাড়ির ভেতরে পাওয়া চালক আনসারের মোবাইল ফোন সূত্রে জানা যায় গাড়িটি ইলিয়াস আলীর।
এরপর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বিএনপির এই প্রভাবশালী নেতা। দীর্ঘ এক যুগেও তাঁর নিখোঁজ হওয়ার রহস্য উদঘাটন হয়নি।
নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই সিলেট বিএনপি নেতারা নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি করে আসছেন। ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিভিন্ন সময়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপির নেতারা। তবে কোনো সন্ধান মিলেনি তার।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বিকেলে সিলেটে এক সংবাদ সম্মেলনে ইলিয়াস আলীসহ গুম হওয়া বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। পাশাপাশি দীর্ঘ ১৫ বছরে দলের যেসব নেতাকর্মী ও ছাত্রজনতাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের অভিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি ও সকল মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, কথিত বন্দিশালা থেকে অনেকেই মুক্ত হচ্ছেন। ইলিয়াস আলীকেও এখন মুক্তি দিতে হবে।
তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীর সন্ধান শেখ হাসিনার সময়কার কিছু ব্যক্তি জানেন। অবিলম্বে তাঁর সন্ধান দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতা সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা এখনও বলছি রাষ্ট্রের কোনো একটি সংস্থা ইলিয়াস আলীকে গুম করে রেখেছে। এই মুহুর্তে তাঁকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘শুধু ইলিয়াস আলী না বিএনপির যত নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে সবাইকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয় দেওয়া হোক।’
এদিকে, ইলিয়াস আলীকে ফেরত চেয়েছেন তার স্ত্রী তাহসীনা রুশদি লুনা। মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাসে তিনি বলেন- ‘আমার স্বামীকে ফেরত দিন। আয়না ঘরের অনেকে ফেরত আসছে। দয়া করে আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দিন। আমরা আর কিছুই চাই না।’