সাম্প্রতিক সময়ে কয়েক দফা বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। ২০২২ সালের বন্যার ক্ষত কাটিয়ে ওঠার আগেই ২০২৪ সালে দুই দফা বন্যার কারণে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। পানি কমার পর ভাঙা ক্ষত-বিক্ষত সড়কের উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন লোকজন। সাথে রয়েছে ভোগান্তিও।
বেশি ভোগান্তি পড়েছেন অসুস্থ, বয়স্ক ও শিশুরা। দুই বছর আগে শতাব্দির ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ বড় সড়কগুলোর মধ্যে দোয়ারাবাজার-বাউর কাপন, কালীপুর -পাগলা- জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ-জয়নগর, জামালগঞ্জ-সেলিমগঞ্জ, দোয়ারাবাজার-বাংলাবাজার, পাথারিয়া-বাংলাবাজার, দিরাই-কলকলিয়া, বিশ্বম্ভরপুর-আনোয়ারপুর, সুনামগঞ্জ-বেতগঞ্জ সড়কগুলো সংস্কার করতে পারেনি এলজিইডি। একইভাবে গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক-দোয়ারাবাজার, নিয়ামত-তাহিরপুর, মদনপুর-দিরাই ও শাল্লা এবং পাগলা জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ আউশকান্দি সড়কসহ জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়ক থেকে দুই বছর আগের বন্যার ক্ষত সারাতে পারে নি সড়ক বিভাগও।
শহরের ধারারগাঁও-নতুন ব্রাহ্মণগাঁও সড়কে নয়টি ভাঙন দেখা দেওয়া ছাড়াও পুরো সড়কের উপরের ঢালাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবার। এই সড়ক দিয়ে পায়ে হেঁটে চলার কোন উপায় নেই। এতে সড়কে চলাচলকারী লক্ষাধিক মানুষ বিপাকে পড়েছেন।
এবার জুন ও জুলাই মাসেই দু’দফা বন্যায় এসব সড়ক ক্ষতির মুখে পড়েছে আবারো। সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রায় ৯৪ কিলোমিটার সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই সড়ক গুলো পুনরায় মেরামত করতে প্রয়োজন প্রায় ২শ ৪৯ কোটি টাকা।
স্থানীয়রা মনে করছেন, বন্যা মোকাবেলায় পরিকল্পিত উদ্যোগ, বিশেষ করে নদী থেকে হাওরে পানি নামার সংযোগ খাল আবার হাওর থেকে নদীতে পানি নামার সংযোগ খালগুলো সচল না করলে প্রতি বছরই এমন দুর্ভোগ পোহাতে হবে। সড়ক বাঁধ ভেঙে প্রতিবছরই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।
দোয়ারাবাজার-বাউর কাপন এলাকার বাসিন্দা আতিক মিয়া বলেন, বন্যায় আমাদের এলাকার সড়কের অবস্থা একদম খারাপ। পায়ে হেঁটেও চলাচল করা মুশকিল। কিন্ত ঝুঁকি নিয়ে এই সড়ক দিয়ে কিছু সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল করছে। এ জন্য ভাড়াও দ্বিগুণ নিচ্ছে। আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পুরো অসহায় অবস্থায় আছি।’
এদিকে গৌরারং ইউনিয়নের ইন্নাতনগর গ্রামের সিএনজি চালক সাগর মিয়া বলেন, গাড়ি নিয়ে এই সড়কে আসলে ভাড়া যা পাওয়া যায়, গাড়ির মেরামত করতে এরচেয়ে বেশি টাকা লাগে। এই সড়কে একদিন চালালে, পরদিন নানা ক্রুটি দেখা দেয়। মেরামত করার জন্য ওয়ার্কশপ নিয়ে যেতে হয় গাড়ি। পরে ঐ দিন আর রোজকার করা যায় না।’
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, ইতোমধ্যে আমরা ৬টি উপজেলার সড়কের ক্ষয়ক্ষতির জন্য বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। সুনামগঞ্জে বিগত ২০২২ সালের বন্যার ধকল কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয় নি। এবার দুই দফা বন্যায় এখন পর্যন্ত জেলার অনেক সাবমার্সিবল সড়কের পানি ঠিকমত নামেনি। এগুলোর ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রতিবেদন পাঠাবো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। এবার পুরো জেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ২০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এগুলো মেরামত করতে আমাদের প্রায় ৪ থেকে ৫শ কোটি টাকার প্রয়োজন।’
সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপজেলা সড়কসহ আঞ্চলিক মহাসড়কেরও ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম জানান, ‘২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক মেরামত করার জন্য একটি প্রকল্পে ১৭শ কোটি টাকার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এবার যে ক্ষতি হয়েছে, সেই সড়ক চালু রাখার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ১৯ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী কাজ করার জন্য ২শ ৪৯ কোটি টাকা লাগবে। এজন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ আকারে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’