শাল্লায় বন্যা আতঙ্কে লক্ষাধিক মানুষ

বন্যা আতঙ্কে দিন-রাত পার করছে সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পায়।  তবে গেল ২০২২ সালের সর্বগ্রাসী বন্যার ভয় যেন কাটছেই না সাধারণ মানুষের। এর পর থেকে হাওর ও নদীতে পানি বৃদ্ধি হতে থাকলে তাদের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। এবছর বন্যা আতঙ্কে হাওরের রাজধানী সুনামগঞ্জে ঈদের আনন্দের পরিবর্তে বিষাদের ছায়া। গতকাল ১৮ জুন সোমবার জেলা শহর সুনামগঞ্জ সহ বেশ কয়েকটি উপজেলা ভারতীয় ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এই আতঙ্ক এখন শাল্লার প্রতিটি ঘরে ঘরে। এদিকে আশঙ্কাজনক ভাবে বাড়ছে নদী ও হাওরের পানি।

সরজমিনে উপজেলার আটগাঁও,বাহারা,হবিপুর,শাল্লা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়- হাওরে পানিতে টইটুম্বুর। নিচু এলাকার বেশকিছু ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। বেশ কিছু গ্রামে পানি ছুঁইছুঁই অবস্থা। সামান্য বৃষ্টি পাত ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে উপজেলার বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হবে। ইতোমধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে নীচু জায়গাতে তৈরি করা ঘর বাড়িতে পানি প্রবেশের উপক্রম হয়েছে। মানুষ তাদের ঘরে রাখা ধান,গবাদিপশু, হাঁস-মোরগ ও শিশু কিশোরদের নিয়ে বিপাকে আছেন তারা। কখন জানি বানের জলে বেসে যেত হয় সবকিছু নিয়ে। তাছাড়া ঘরের ভেতরে পানি না ঢুকলেও ঘরবাড়ির আশেপাশে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকায় খুব আতঙ্কে দিন পার করছেন হাওর পাড়ের মানুষেরা।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, ‘আমরা খুব ভয়ে আছি। পানি কিন্তু বাড়িত যে কোন সময় উঠতে পারে। ক্রমাগত বেড়েই চলছে হাওরের পানি। ২০২২ সালের মতো যদি বন্যা হয় তাহলে মহাবিপদে পড়ে যাবো। শুনতেছি উপরে (সুনামগঞ্জ) বন্যা হয়েছে। উপরে পানি নামলে আমাদের এখানে ছোট পরিসরে হলেও বন্যা হবেই। তবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বড় বন্যার আশঙ্কা করছি।’

এ বিয়ে জহিরুল ইসলাম সুনামগঞ্জের বাসিন্দা ঈদের ছুটিতে আসেন শাল্লার গ্রামের বাড়িতে তিনি জানান, ‘আমি ঈদের আগের দিন গ্রামের বাড়িতে এসেছিলাম। ঈদের দিনের বৃষ্টিতেই মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে বন্যা হবে।পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির চেষ্টা করেছি। ঈদের পরের দিন ভোর ৬ টায় সংবাদ পেলাম পানি বাসায় ছুঁইছুঁই করছে। পরে আমার স্ত্রীকে নিয়ে বজ্রপাত ও ভারি বৃষ্টি উপেক্ষা করে সিএনজিযোগে শহরের দিকে রওয়ানা করে জানতে পারি বাসায় পানি প্রবেশ করেছে। এখনো বাসায় পানি আছে। চিড়া-মুড়ি খেয়ে আছি। দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই বৃহত্তর সিলেটের জন্য।’

আবহাওয়া ডটকমের প্রধান আবহাওয়াবিদ, কানাডায় গবেষণারত মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, ‘সিলেট সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ হতে পারে। আজকে মঙ্গলবার দুপুর ২ টা পর্যন্ত সিলেট সুনামগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হতে পারে। এই অঞ্চলের নিকটতম ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৬০০ থেকে ১০০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হতে পারে। শুধু তাই নয় আগামী ৭২ ঘণ্টা আবহাওয়া একই অবস্থায় থাকার আশঙ্কা করা যাচ্ছে।’

ইতোমধ্যে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জেলার সব আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। পাশাপাশি বানভাসি মানুষের সব ধরণের সহযোগিতার প্রস্তুতি নিয়েছেন।

এ বিষয়ে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, ‘টেনশন করার কোন কারন নেই আমাদের ৬৬ টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রস্তুত রয়েছে। সেই কেন্দ্রগুলোতে লোকজন আশ্রয় নিতে পারবে। তিনি বলেন ত্রাণ বিতরণেও কোনো সমস্যা হবে না। জেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ আসা মাত্রই আমরা এগুলো বিতরণ করবো।’