চে গুয়েভারা : বিপ্লবের অনন্য কিংবদন্তি

“জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানোর ভাষা নাই চে!
পুঁজিবাদের এই নরকে কোথাও একটা সমাজতান্ত্রিক গোলাপ পাইনি।”- লেখক।

ডাক্তার আর্নেস্তো চে গুয়েভারা, এক অমর মহাবীর। পুরো নাম আর্নেস্তো গুয়েভারা দে লা সের্না। আর্জেন্টাইন বংশোদ্ভূত, গুয়াতেমালায় প্রশিক্ষিত আর কিউবার মুক্তিসংগ্রামের সমরনায়ক, যিনি আমৃত্যু লড়েছেন লাতিন আমেরিকাকে ইয়াঙ্কি সাম্রাজ্যবাদ থেকে মুক্ত করে শ্রেণীহীন সমাজে সর্বহারাদের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করতে।

জন্মের পর পরই যিনি হাঁপানি রোগের সাথে সংগ্রাম করে বেড়ে উঠেছেন প্রতিনিয়ত। যুবক বয়সে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছায় ভর্তি হন মেডিসিন বিষয়ে। ভালোই চলছিল তার ডাক্তারি পড়াশোনা, ব্যক্তিগত জীবন আর প্রেম। অথচ পিতার ইচ্ছা অনুযায়ী ডাক্তারি পাশ করেও তিনি ঠিক করেছিলেন, ‘একটা মানুষের সেবা করার চাইতে একটা জাতির সেবা করা অনেক বড় কর্তব্য আর জাতির সেবা করতে ছোট্ট একটা ছুরির চেয়ে বড় একটা তলোয়ার বেশি দরকার।’ তিনি সেই কাজই করেছিলেন।

একদিন বন্ধুর সঙ্গে হঠাৎ মোটরসাইকেলে বের হয়েছিলেন নিজ ভূখণ্ড ভ্রমণে। এ ভ্রমণ আর্নেস্তোকে বঞ্চিত মানুষদের ‘চে’ বা ‘বন্ধু’তে পরিণত করে। দীর্ঘ এ মোটরসাইকেল ভ্রমণে আর্নেস্তো একদিকে যেমন দেখেন নিম্নশ্রেণির মানুষের দুঃখ, দুর্দশা, বঞ্চনা, নিপীড়ন; আর অন্যদিকে দেখেন শাসকের দুর্বৃত্তায়ন, শোষণ, অত্যাচার। এ বোধ থেকেই শুরু করেন মানব মুক্তির লড়াই। চে গুয়েভারা ছিলেন কিউবা বিপ্লবের প্রধান ব্যক্তিত্ব।

কিউবাকে মার্কিন ঔপনিবেশবাদের গর্ত থেকে টেনে তুলেই তিনি ক্ষান্ত হননি যদিও কিউবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে চিরদিন আয়েশে কাটিয়ে দিতে পারতেন বাকিটা জীবন। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন আর মনোবল তাকে থামতে দেয়নি। হাঁপানি তাকে পঙ্গু করতে পারে নি, তিনিই হাঁপানিকে পঙ্গু করে রেখেছিলেন। ভাবতেন, কতদিন এভাবে পারবেন!

সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি পেয়েছিলেন অগণন সহযোদ্ধা যাঁদের হৃদয়ে সর্বদা জ্বলত দ্রোহের অনল। একবার এক কাছের বন্ধুর সাথে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন লাতিন আমেরিকার দেশে দেশে, দেখেছেন মানুষের দুঃখ দুর্দশার বাস্তব চিত্র। তাইতো তিনি ব্যক্তিগত জীবনের অনেক ঊর্ধ্বে রেখেছিলেন তার সংগ্রামকে। কর্তব্য তাকে নিয়ে গেছে কর্মক্ষেত্রে এবং স্ত্রী য়্যালাইদার সহযোগিতা এবং কর্মোদ্যম সাহচর্য তাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল পদে পদে।

বলিভিয়াকে মুক্ত করতে দলবল নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন সেখানে। জঙ্গলে ক্যাম্প করে সংগঠিত করেছিলেন বিপ্লবীদের। কিন্তু জনসংযোগের অসুবিধা এবং বলিভিয়ান কমিউনিস্ট নেতৃত্বের বিশ্বাসঘাতকতায় চে’কে থামতে হয়েছিল। কিউবার পর কঙ্গো হয়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গিয়েছিলেন বলিভিয়ায়। সেখানেই আহত অবস্থায় আটক হন তিনি। ১৯৬৭ সালে হত্যা করা হয় তাকে। তিনি মারা পড়েছিলেন লড়াই করতে করতে। মাতাল তেরানা তাঁকে অচৈতন্যে খুন করেছিল বন্দিদশায়, বলিভিয়ার সামরিক বাহিনীর ইন্ধনে আর আমেরিকার প্রকাশ্য মদদে।

সেদিন চে মারা গিয়েও নবজন্ম লাভ করেছিলেন। আজ সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে বুর্জোয়া আর সাম্রাজ্যবাদীদের উত্থানকে রহিত করতে সহস্র চে তৈরি হচ্ছে পৃথিবীর দিকে দিকে।

চে’র মৃত্যু নাই।

  • পুনশ্চ: বিপ্লব ও বিদ্রোহের প্রতীক চে গুয়েভারার ৯৬তম জন্মদিন আজ। ১৯২৮ সালের আজকের এই দিনে তিনি আর্জেন্টিনার সান্তা ফে শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে হত্যা করা হয় তাকে। সফল বিপ্লবের পর কিউবাবাসী ভালোবেসে তার নাম দেয় ‘চে’। স্প্যানিশ ভাষায় যার অর্থ প্রিয়।