সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষে সন্ত্রাসী হামলা, তান্ডব ও প্রশাসনকে অপব্যবহারের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি উঠেছে। সোমবার (১০ জুন) বিকেলে সিলেট কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে একটি প্রতিবাদ কর্মসূচী থেকে এমন দাবি তোলা হয়। একইসঙ্গে ওই নির্বাচনের পর পরাজিত প্রার্থীর বাড়িতে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারেরও দাবি জানানো হয়।
এর আগে, গত ৫ জুন মধ্যনগর উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন ৬ জুন নির্বাচনের পরাজিত প্রার্থী সাইদুর রহমানের বাড়িতে সশ্রস্ত্র হামলা চালানো হয়। এতে সাইদুর রহমান সহ তার পরিবারের সাত সদস্য আহত হন। আহতদের চিকিৎসা গ্রহণের ক্ষেত্রেও বাধা প্রদান করা হয়। অভিযোগ রয়েছে নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী প্রার্থী আবদুর রাজ্জাক ভূঁইয়ার স্বজন ও অনুসারীরা এ হামলা চালায়। এই হামলা ও তৎপরবর্তী বিভিন্ন কর্মকান্ডের প্রতিবাদে আজ সিলেটে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে ‘সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন, সিলেট’।
সাবেক ছাত্র নেতা প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান চৌধুরী ওয়েছের সভাপতিত্বে ও দেবাশীষ দেবুর সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে স্বাগত বক্তব্যে ‘সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন, সিলেট’-এর সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘৬ জুন মধনগরে মধ্যযুগীয় বর্বরতা চালানো হয়েছে। নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর অনুসারীরা দলবল নিয়ে পরাজিত প্রার্থীর বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। হামলা করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, আহতদের চিকিৎসা নিতেও বাধা দিয়েছে। এমনকি সাইদুর রহমানের স্বজনদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এলাকায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। এমনকি তারা মামলাও করতে পারছেন না।’
কিম বলেন, ‘সাইদুর রহমানের জামাতা দ্বোহা চৌধুরী সিলেটের প্রতিশ্রুতিশীল সাংবাদিক। যিনি সততার সাথে সিলেটে দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা করে সুনাম অর্জন করেছেন। শ্বশুরের নির্বাচন দেখতে তিনিও মধ্যনগরে গিয়েছিলেন। নির্বাচনের আগে নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে তার পত্রিকায় রিপোর্টও করেন। এসব কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকরা দ্বোহা চৌধুরী এবং তার স্ত্রী-সন্তানদেরও ওইদিন জিম্মি করে রাখে। সবমিলিয়ে তারা মধ্যনগরে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।’
এসব ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে কিম আরও বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী আবদুর রাজ্জাক ভূঁইয়ার ভাই পুলিশের একজন বড় কর্মকর্তা। অভিযোগ রয়েছে ওই পুলিশ কর্মকর্তার কারণেই রাজ্জাকের অনুসারীরা এমন নৃশংস হামলা চালিয়েও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। উল্টো হামলায় আহতদেরকেই পুলিশ দিয়ে হয়রানি করছেন, বাড়িঘরে যেতে দিচ্ছেন না। এছাড়া নির্বাচনের সময় এবং হামলার সময়ও মধ্যনগরে পুলিশ বিতর্কিত ভুমিকা পালন করে।
তিনি বলেন, ‘একজন সাবেক আইজিপির ভয়াবহ দুর্নীতির কাহিনী নিয়ে যখন দেশজুড়ে সমালোচনা চলছে, যখন পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তিই প্রশ্নের মুখে পড়েছে, তখন আরেক উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার এমন অপব্যবহারের অভিযোগ দুঃখজনক। তাই পুলিশের ভাবমূর্তির স্বার্থেই এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন। একইসাথে আক্রান্ত পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরী।’
এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মধ্যনগর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আরেক প্রার্থী সজল কান্তি সরকার, ওই এলাকার বাসিন্দা বাদল চন্দ্র সরকার, সাংবাদিক উজ্জ্বল মেহেদী, ইমজা সভাপতি সজল ছত্রী, সাবেক সভাপতি আশরাফুল কবির, সাধারণ সম্পাদক শ্যামানন্দ দাশ, সিলেট ভয়েস’র প্রকাশক সেলিনা হোসেন চৌধুরী, পরিবেশ কর্মী রেজাউল কিবরিয়া, রুমেনা বেগম রুজি, সৈয়দ আনসার আলী, সংস্কৃতিকর্মী মাহবুব রাসেল, নাহিদ পারভেজ বাবু, বিমান তালুকদার, যুব ইউনিয়ন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, সাবেক ছাত্রনেতা সহিদুজ্জামান পাপলু, সপ্তর্ষি দাশ, ছাত্র ইউনিয়ন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ হাসান প্রান্তিক, ছাত্রফ্রন্ট সিলেটের সাধারণ সম্পাদক বুশরা সুহেল, কবি মেঘদাদ মেঘ প্রমুখ।
সাংবাদিকদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজিব রাসেল, ইয়াহইয়া মারুফ, বাপ্পা মৈত্র, মামুন হোসেন, আহমেদ জামিল, শাকিলা ববি, নাবিল হোসেন, নয়ন নিমু, আশরাফ আহমদ প্রমুখ।