সিলেটে প্রতিনিয়ত বাড়ছে অস্বাভাবিক বজ্রপাত। বিনা মেঘে বজ্রপাতের কথা প্রবাদে থাকলেও এবছর সিলেটের আবহাওয়াতে সেটি দেখা যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে বজ্রপাতের সময় মানুষ কিছুটা বুঝে উঠতে পারলেও এবছর মেঘ ছাড়াই বা হঠাৎ মেঘের ঘনঘটায় অস্বাভাবিক বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে।
গত দুই মাসে সিলেট বিভাগে বজ্রপাতে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় মৃত্যু হয়েছে ৭-৮ জনের। এর মধ্যে অস্বাভাবিক বজ্রপাতে শিশুসহ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ ও বিশেষেজ্ঞরা বলছেন, জলাবায়ু পরিবর্তনের কারণে এরকম অস্বাভাবিক বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে। এতে প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে।
গত শুক্রবার (১৭ মে) দুপুরে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার আটগ্রামের নোয়াগ্রাম এলাকায় বাবা-ভাইয়ের সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে রেদওয়ান আহমদ (১২) নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। নিহত রেদওয়ান আহমদ নোয়াগ্রামের মাসুক আলীর ছেলে। সে স্থানীয় সিঙ্গাইরকুড়ি আলিয়া মাদরাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
এর আগে গত বুধবার (১৫ মে) বিকেলে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার গোয়াবাড়ি ফুটবল খেলার মাঠে বজ্রপাতে সবুজ মিয়া (২২) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত সবুজ মিয়া উপজেলার জৈন্তাপুর ইউনিয়নের কেন্দ্রী গ্রামের সগির মিয়ার ছেলে। তিনি কেন্দ্রী গ্রামের ফুটবল দলের হয়ে খেলতে গিয়েছিলেন সেখানে।
এই দুই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বজ্রপাতের সময় বৃষ্টিপাত ছিল না। আকাশে মেঘের ঘনঘটায় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেছে। এতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বঙ্গপোসাগর থেকে প্রবাহিত মৌসুমী বায়ু সিলেটের জৈন্তা ও খাসিয়া পাহাড়ে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ ও জলীয়বাষ্পের যে তারতম্য হচ্ছে তার কারণে আকাশে শুষ্ক মেঘমালার মধ্যে বারবার সংঘর্ষ হচ্ছে এবং বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে।
সিলেট ও সুনামগঞ্জ বজ্রপাতের জন্য ‘হট জোন’উল্লেখ করে তিনি বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে পরিবেশের অনেক উপাদানে পরিবর্তন আসছে। যেভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে, তাতে বজ্রপাতের ঘটনা আরও বাড়বে। এজন্য মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৩০০ জন বজ্রপাতে মারা যায়। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে মারা যায় বছরে গড়ে ২০ জনেরও কম। বাংলাদেশে গাছপালা কেটে ফেলা, বিশেষ করে খোলা মাঠে উঁচু গাছ ধ্বংস করে ফেলা, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেয়া এবং অসচেতনতার কারণে বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ছে।
এই দুযোর্গ রক্ষা পেতে ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া অফিসকে আলাদা করে বজ্রপাতের পূর্বাভাস জানানোর দিকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। অন্তত তিনদিন থেকে এক সপ্তাহের সঠিক পূর্ভাবাস দিতে হবে। বজ্রপাতের পূর্বাভাস যাতে ৯৫ শতাংশ সঠিক থাকে সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে। বিশেষ করে কৃষক ও মাঠের শ্রমিকদের মধ্যে এই পূর্ভাবাস জানিয়ে সচেতন করে তুলতে হবে। একই সঙ্গে হাওরাঞ্চলে তাল গাছসহ উঁচু গাছ বেশি করে লাগানোর পরামর্শও দেন তিনি।
আবহাওয়াবিদরা বলছের, গত কয়েকদিন সিলেটের তাপমাত্রা অনেক বেশি ছিল। তাই বায়ুর আর্দ্রতার তারতম্যের কারণে মেঘমালা প্রচুর পরিমাণে তৈরি হচ্ছে। এ কারণে সিলেটে কালবৈশাখীর সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টি দেখা দিচ্ছে।
এদিকে, বজ্রপাত থেকে মৃত্যুর সংখ্যা কমাতে বিশেষজ্ঞরা বজ্রপাতের সঠিক পূর্বাভাসের গুরুত্ব দিলেও সিলেটের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসেন বলছেন-‘এটা স্বাভাবিক বিষয়। মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের মৌসুম। এটা কমন বিষয়, সবারই জানা। আলাদা করে পূর্ভাবাস দেওয়ার কিছু নেই।’