বিয়ানীবাজারে সংসদ নির্বাচনের প্রভাব পড়বে ভোটের মাঠে

সিলেটের বিয়ানীবাজারে সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততোই জমে উঠছে নির্বাচনের আমেজ। নির্ঘুম প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটছে প্রার্থীদের। দিনরাত ছুটে চলছেন ভোটারদের দুয়ারে। সঙ্গে কর্মী-সমর্থকরা। ভোটারদের মন জয় করতে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। ধনী, গরিব, দিনমজুর, শ্রমিক-সবাইকে বুকে জড়িয়ে ধরছেন। মার্কা দেখিয়ে ভোট চাইছেন। এতে করে প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

তবে সদ্য শেষ হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রভাব কিছুটা হলেও এবারের উপজেলা নির্বাচনে পড়বে বলে মনে করছেন ভোটাররা। সংসদ নির্বাচনে উপজেলায় দুটি বলয় প্রকাশ্যে আসায় এর প্রভাব এখনও রয়ে গেছে। যার ফলে বেশিরভাগ নেতাকর্মী এখনও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।

আগামী ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯জন প্রার্থী। এরমধ্যে আবুল কাশেম পল্লব (হেলিকপ্টার), আতাউর রহমান খান (টেলিফোন), মো. আব্দুল বারী (দোয়াত কলম), দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল (মোটরসাইকেল), মো. জামাল হোসেন (আনারস), মোহাম্মদ জাকির হোসেন (কৈ মাছ), গৌছ উদ্দিন (শালিক পাখি), মো. জাকির হোসেন (কাপ-পিরিচ) ও মো. জহির উদ্দিন (ঘোড়া) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বিগত ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চারপ্রার্থীর মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর অল্প ভোটের ব্যবধানে বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান খান জয়লাভ করেছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন আবুল কাশেম পল্লব, মাওলানা ফয়জুল ইসলাম ও আব্দুল মন্নান। ২০১৯ সালে নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন আবুল কাশেম পল্লব।

তবে পাঁচ বছরের ব্যবধানে ভোটের মাঠের চিত্র পুরো পাল্টে গেছে। ভোটাররা বলছেন, সদ্য শেষ হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রভাব কিছুটা হলেও এবারের উপজেলা নির্বাচনে পড়বে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদের নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সরোয়ার হোসেনের ঈগলের সমর্থন দেয়া ৬ প্রার্থী নিয়ে দুই বলয়েই ধোঁয়াশা রয়েছে। যদিও তফশীল ঘোষণার পর থেকে এসব ধোঁয়াশাকে এক পাশে রেখে সমর্থকরা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। তবে বেশিরভাগ নেতাকর্মী এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।

জানা গেছে, নির্বাচনের যত সময় ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের অবস্থান একেক এলাকায় একেক রকম চিত্র ধারণ করছেন। তবে বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব, সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান খান, দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল, গৌছ উদ্দিন, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান জামাল হোসেন- এই ৪ প্রার্থী এলাকাভিত্তিক ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তবে প্রচারণায় পিছিয়ে নেই মো. আব্দুল বারী, মোহাম্মদ জাকির হোসেন, জহির উদ্দিন ও মো. জাকির হোসেন। নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে তারাও দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ভোটের মাঠে।

এলাকাভিত্তিক ভোটার সমর্থকদের অবস্থান পরিষ্কার হলেও পুরো উপজেলা মিলিয়ে কে এগিয়ে সেটি এখনও পরিষ্কার নয়। ভোটাররাও কাউকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন না। যার ফলে ভোটের মাঠে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ দিকে আবুল কাশেম পল্লব, গৌছ উদ্দিন ও দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়ালের শক্ত অবস্থান রয়েছে। তাদের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছেন আতাউর রহমান খান ও জামাল হোসেন। আবার পৌরসভায় আবুল কাশেম পল্লব, মোহাম্মদ জাকির হোসেন, জামাল হোসেন, মো. আব্দুল বারী ও দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়ালের সাথে ভাল একটি অবস্থান রয়েছে আতাউর রহমান খানের।

অন্যদিকে, উপজেলার পশ্চিম দিকে আতাউর রহমান খানের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মো. আব্দুল বারী, মো. জাকির হোসেন, জামাল হোসেন, আবুল কাশেম পল্লব, দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল ও মো. জহির উদ্দিন।

উপজেলার পূর্বদিকে আউয়াল-পল্লবের মধ্যে মূল লড়াই হলেও সেখানে গৌছের অবস্থান স্পষ্ট হচ্ছে। কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন আতাউর রহমান খান।

উপজেলার উত্তর দিকে প্রত্যেক ইউনিয়নের অবস্থান একেক ধরনের। উত্তরের তিন ইউনিয়নের আতাউর রহমান খানের শক্ত অবস্থানের সাথে দুইটি করে ইউনিয়নে দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল ও আবুল কাশেম পল্লবের ভালো অবস্থান রয়েছে।

এদিকে, দিন দিন ভোটের অবস্থান ভাল হচ্ছে গৌছ উদ্দিনের। ৪ ইউনিয়নে নিজের অবস্থান আগের চেয়ে ভাল রয়েছে তার। অপর প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদর মধ্যে উত্তরের ৫ ইউনিয়নে মো. আব্দুল বারী, জামাল হোসেন ও মোহাম্মদ জাকির হোসেনের অবস্থান ভাল হচ্ছে।