‘পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্টে আমরা পাঁচ ভাই’, এটুকু লিখে পাঁচজনের ছবিসহ ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জোবায়ের মিয়া।
সিলেট শহরের জল্লার পাড় সড়কে পাঁচ ভাই রেস্তোরাঁয় ১৪ এপ্রিল দুপুরে খাওয়ার পর রেস্তোরাঁর নামফলক পেছনে রেখে তোলা ছবিটি স্মৃতি ধরে রাখার জন্যই পোস্ট করেছিলেন তিনি। কিন্তু এই ফেসবুক পোস্ট নিয়ে বিপাকেই পড়েছেন সহকারী অধ্যাপক জোবায়ের মিয়া। খবর প্রথম আলোর।
জোবায়ের মিয়া জানিয়েছেন, এই পোস্ট দেওয়ার পর থেকে তিনিসহ অন্য ভাইয়েরা ফেসবুকে অভিনন্দনবার্তায় ভাসছেন। অনেকে রেস্তোরাঁয় চাকরি দিতে বলছেন। আবার রেস্তোরাঁর নামফলকে একটি কোমল পানীয়ের বিজ্ঞাপন থাকায় এক দল এই পাঁচ ভাই ও রেস্তোরাঁটিকে বর্জনের ডাক দিয়ে রীতিমতো হুংকার দিচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এ পোস্টে ১ লাখ ১৪ হাজারের বেশি ফেসবুক আইডি থেকে লাইক, লাভ দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। প্রায় ৩ হাজার মন্তব্যের পাশাপাশি ৩৭৮ বার শেয়ার হয়েছে পোস্টটি।
চিকিৎসক মো. জোবায়ের মিয়া নিজের কাজের ফাঁকে ফেসবুকে ঢুকে এই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে লিখছেন, ‘যাঁরা না বুঝে কমেন্ট করছেন, তাঁদের উদ্দেশে বলছি যে আমরা ওখানে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আপনাদের ক্যাপশনটা বুঝতে অসুবিধা হয়েছে।’
কিন্তু জোবায়ের মিয়ার এ মন্তব্যে তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না। মন্তব্যকারীদের কেউ কেউ এ রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার স্মৃতি রোমন্থন করে জোবায়ের মিয়া ও তাঁর পাঁচ ভাইকে আশীর্বাদও করছেন। মন্তব্যের ঘরে কেউ কেউ এখানকার খাবারের মান নিয়ে নেতিবাচক কথা লিখলে তখন অন্যরাই ওই ব্যক্তিকে আক্রমণ করছেন।
ফেসবুকের এ পোস্ট নিয়ে কথা হলো জোবায়ের মিয়ার সঙ্গে। বললেন, ‘কাকতালীয়ভাবে আমরাও পাঁচ ভাই। তাই সিলেটে বেড়াতে গিয়ে খাওয়ার পর পাঁচ ভাই ছবি তুলেছিলাম, তা-ই পোস্ট করেছিলাম। কল্পনাও করিনি আমার এ পোস্ট এত আলোচনার জন্ম দেবে। এখন বারবার ফেসবুকে ঢুকে আমরা যে এ রেস্টুরেন্টের মালিক নই, তা বারবার লিখছি।’
জোবায়ের মিয়া জানালেন, তাঁর অন্য ভাইয়েরা হলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রামার মো. তানভীর হোসেন, একটি বেসরকারি কোম্পানিতে এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত মো. নওরীন হাসান, ব্যবসায়ী ইয়াসির আরাফাত এবং ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ফিল্ড অর্গানাইজার হিসেবে কর্মরত মো. রাফসান জানি।
তাঁদের তিন বোনের মধ্যে হাসিনা মুন্নি গৃহিণী, রুবিনা পন্নি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং আরেক বোন শামীমা নাসরিন পান্না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
১৩ এপ্রিল জোবায়ের মিয়া তাঁর মা সৈয়দা হাওয়া বেগম, খালা শামীমা পারভীন এবং ভাই-বোনদের পরিবারের সদস্যসহ মোট ২৬ জন সিলেটের শ্রীমঙ্গলে ঘুরতে যান। পরে সিলেট শহরে গিয়ে ওই রেস্তোরাঁয় খান।
জোবায়ের মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে কখন যে কোন বিষয় ভাইরাল হবে, তা আগে থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই। ভাইরাল তো হয়েছিই, এখন তো মানুষ রেস্টুরেন্টে চাকরিও চাচ্ছেন। রেস্টুরেন্টের আসল মালিক সিলেটের পাঁচ ভাইকে চিনি না, এ পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পর মনে হচ্ছে, আবার সিলেট গেলে ওই ভাইদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে আসব। তাঁদের অভিনন্দন দিয়ে আসব।’
রেস্তোরাঁটিতে খাওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে জোবায়ের মিয়া বললেন, খাবারের মান ভালো। সিলেটের বিখ্যাত সাতকরা দিয়ে গরুর মাংস, বিভিন্ন ধরনের ভর্তা, বোয়াল মাছ, ডাল, সাদা ভাত সবাই খুব তৃপ্তি করে খেয়েছেন।
সিলেটের পাঁচ ভাই রেস্তোরাঁর খাবারের সুনাম আছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউব ঘেঁটে তার প্রমাণও পাওয়া গেল। এটি নতুন করে ফেসবুকে আলোচনার জন্ম দিয়েছে, তা রেস্তোরাঁর মালিকেরা জানেন কি না, তা জানার জন্য পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ভাই মালিক রফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে কল করলে ব্যস্ত আছেন জানিয়ে কথা বলার ফুরসতই পেলেন না।
২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর ‘পাঁচ ভাইয়ের আপ্যায়ন’ নামে প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। জল্লার পাড় সড়কের দাঁড়িয়া পাড়ার মোড়ের পাঁচ ভাই রেস্তোরাঁটি তখনই ছিল জমজমাট। রফিকুল ইসলাম একসময় নিজেই বিভিন্ন হোটেলে কাজ করতেন। তারপর পাঁচ ভাই মিলে একটি মেস চালাতেন। কাগজে-কলমে পাঁচ ভাই নাম দিয়েছিলেন। তারপর আর থেমে থাকতে হয়নি।