সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী তাহিরপুর উপজেলায় শুরু হচ্ছে পণতীর্থ মহাবারুণী গঙ্গাস্নান ও শাহ আরেফিন (র.) ওরস মাহফিল।
শত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ দুটি অনুষ্ঠান ঘিরে সনাতন ও ইসলাম ধর্মাবলম্বী লক্ষাধিক ভক্ত-আশেকান ও দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে যাদুকাটা নদীর দুই পাড় ও সীমান্তবর্তী লাউড়েরগড় এলাকায়।
আজ শুক্রবার (৫ এপ্রিল) থেকে তিনদিন ব্যাপী লাউড়েরগড় এলাকায় শাহ আরেফিন (র.) এর মোকামে অনুষ্ঠিত হবে বার্ষিক ওরস মোবারক।
পরের দিন শনিবার (৬ এপ্রিল) থেকে যাদুকাটা নদী সংলগ্ন রাজারগাঁও এলাকায় মহাবিষ্ণুর অবতার অদ্বৈত জন্মধামে পণতীর্থ মহাবারুণী গঙ্গাস্নান ও মেলা বসবে।
উৎসব দুটি ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা ভক্ত-আশেকানদের আগমনে পুরো এলাকা সম্প্রীতির এক মিলনমেলায় পরিণত হয়।
তবে এ বছর পবিত্র রমজান মাস থাকায় শাহ আরেফিন মোকামে কাফেলাগুলোতে মাইক, সাউন্ড সিস্টেম ও গান-বাজনাতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এছাড়াও রমজানের পবিত্রতা বজায় রেখে অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ঐতিহাসিকদের মতে, অতীতের পাপ মোচন, ঈশ্বরের আশীর্বাদ ও পুণ্য লাভের আশায় প্রতিবছর চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে দেশ ও দেশের বাহিরের কয়েক লাখ সনাতন ধর্মের অনুসারী নারী-পুরুষ শ্রী অদ্বৈত আচার্য ঠাকুরের আবির্ভাবস্থল পণতীর্থ স্মৃতিধাম যাদুকাটা নদীর জলে পুণ্যস্নান করে পাপমোচন এবং ঈশ্বরের কৃপা লাভ করেন। তাঁদের বিশ্বাস, পণতীর্থ স্নানের মাধ্যমে মনোবাসনা পূর্ণ হয়। এ উপলক্ষে বারুণী মেলা বসে।
১৫১৬ খ্রিষ্টাব্দে এই তীর্থের সূচনা করেন মহাপুরুষ শ্রী অদ্বৈত আচার্য ঠাকুর। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে অদ্বৈত আচার্য মন্দির গড়ে উঠেছে যাদুকাটা নদীর তীরবর্তী রাজারগাঁও গ্রামে।
অন্যদিকে পণতীর্থ গঙ্গাস্নানের তারিখের সাথে মিল রেখে উপজেলার সীমান্তবর্তী লাউড়েরগড় এলাকায় শাহ আরেফিন (র.) এর বার্ষিক ওরস মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ওরস উপলক্ষে সেখানেও মেলা বসে।
স্থানীয়দের ধারণা, হযরত শাহ আরেফিন এর মোকাম ভারত সীমান্তের ওপারে এক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত হলেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অগণিত মুসলমান নর-নারী ওরসে শরিক হন এবং দূর থেকেই এই দরবেশের মোকাম জিয়ারত করেন।
ওরসে মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজন ছাড়াও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান,পাহাড়ি ও বাঙালি ভক্ত-আশেকান শাহ আরেফিনের স্মৃতিবিজড়িত লাউড়েরগড় এলাকায় সমবেত হন।