কনকাশন বদলি হিসেবে মাঠে নামা তানজিদ তামিমের পর রিশাদের ঝড়ো ইনিংসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ নিজের করে নিলো বাংলাদেশ।
ফিল্ডিংয়ে সৌম্য সরকার ঘাড়ে আঘাত পেয়েছিলেন। যে কারণে আর ব্যাটিংয়ে নামতে পারেননি। তার কনকাশন বদলি হিসেবে ইনিংস ওপেন করতে নেমেছিলেন তানজিদ তামিম। সুযোগ পেয়ে তা দুহাত ভরে কাজে লাগালেন এই তরুণ ওপেনার। এক প্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়লেও আরেক প্রান্তে বোলারদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন তামিম। ৫১ বলে তুলে নেন ব্যক্তিগত ফিফটি। এগোচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। তবে কাটা পড়লেন ৮৪ রানে।
২২তম ওভারে হাসারাঙ্গাকে উরিয়ে মারতে গিয়ে সীমানার কাছে ধরা পড়েন তামিম। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৮১ বলে ৮৪ রান। এটি তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।
লঙ্কানদের আড়াইশর আগে আটকে রেখে জয়ের পথটা সহজ করে দিয়েছিলেন বোলাররা। ছোট লক্ষ্য তাড়ায় তানজিদ তামিমের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় বাংলাদেশ। তবে মিডল অর্ডার ব্যাটাররা সুবিধা করতে পারেননি। তাওহিদ হৃদয়-মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা ব্যর্থ হলে ম্যাচে ফেরে শ্রীলঙ্কা। শঙ্কা জেগেছিল জয় নিয়েও। সেই শঙ্কা উড়ে গেছে রিশাদ হোসেনের ঝড়ে। তার দারুণ এক ক্যামিওতে ৪ উইকেটের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ।
সোমবার (১৮ মার্চ) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করে লংকানরা। ইনিংসের শেষ বলে অলআউট হওয়ার আগে তারা সংগ্রহ করে ২৩৫ রান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ অপরাজিত ১০১ রান করেন লিয়ানাগে। বাংলাদেশের হয়ে ৪২ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন তাসকিন আহমেদ।
জবাবে ৪০ ওভার ২ বলে ৬ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৪ রান করেছেন তানজিদ তামিম। ১৮ বলে অপরাজিত ৪৮ রান করেছেন রিশাদ হোসেন।
সিরিজে প্রথমবার খেলতে নামা দুই ওপেনার তানজিদ তামিম ও এনামুল হক বিজয় দুর্দান্ত শুরু করেছিলেন। ৪৭ বলে প্রথম ফিফটির দেখা পায় বাংলাদেশ। কিন্তু এরপরই ফিরেছেন বিজয়।
নবম ওভারের দ্বিতীয় বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথে করেছিলেন লাহিরু কুমারা, সেখানে কভার ড্রাইভ করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন এক্সট্রা কভারে দাঁড়িয়ে থাকা আভিষ্কা ফার্নান্দোর হাতে। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২২ বলে ১২ রান।
তিনে নেমে আজ ব্যর্থ হন নাজমুল হোসেন শান্ত। ১১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে লাহিরুকে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে খোঁচা দিয়েছেন শান্ত। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে ৫ বলে এসেছে ১ রান।
গত ম্যাচে অল্পের জন্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেছিলেন তাওহীদ হৃদয়। অপরাজিত ছিলেন ৯৬ রানে। আজকের ম্যাচেও ভালো শুরু করেছিলেন। তবে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারলেন না। সাজঘরে ফিরেছেন বাজে এক শটে। লাহিরুর খাটো লেংথের বল টেনে পুল করতে গিয়ে ভুল করেছেন হৃদয়। ডিপ ব্যাকওয়াড স্কয়ারে ক্যাচ দেওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৩৬ বলে ২২ রান।
ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে ব্যর্থ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মুশফিকের আগে উইকেটে এসে এদিন ৪ বলে ১ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি।
ফিল্ডিংয়ে সৌম্য সরকার ঘাড়ে আঘাত পেয়েছিলেন। যে কারণে আর ব্যাটিংয়ে নামতে পারেননি। তার কনকাশন বদলি হিসেবে ইনিংস ওপেন করতে নেমেছিলেন তানজিদ তামিম। সুযোগ পেয়ে তা কাজে লাগান এই তরুণ ওপেনার। এক প্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়লেও আরেক প্রান্তে বোলারদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন তামিম। ৫১ বলে তুলে নেন ব্যক্তিগত ফিফটি। এগোচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। তবে কাটা পড়েন ৮৪ রানে।
তামিম ফেরার পর দলের হাল ধরেন মুশফিকুর রহিম। মেহেদি হাসান মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে ৪৮ রানের জুটি গড়েন মুশফিক। মিরাজ ২৫ রান করে সাজঘরে ফিরলে ১৭৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ।
তবে এদিন উইকেটে এসে রীতিমতো ঝড় তোলেন রিশাদ। তার ঝড়ে এলোমেলো হয়ে যায় লঙ্কান বোলিং লাইনআপ। ৫ চার আর ৪ ছক্কায় ১৮ বলে অপরাজিত ৪৮ রানের ইনিংস খেলে একটু আগেভাগেই দলের জয় নিশ্চিত করে দেন রিশাদ। অপর প্রান্তে আস্থার প্রতীক হয়ে ৩৭ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। ৫৮ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
এর আগে ম্যাচের শুরুতে বল হাতে দারুণ করেছেন বাংলাদেশের পেসাররা। বিশেষ করে তাসকিন আহমেদ বেশ সুইং পেয়েছেন। এই পেসারের সুইংয়ে চোখে রীতিমতো সর্ষে ফুল দেখেছেন পাথুম নিশাঙ্কা! ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলটি ফুললেংথে করেছিলেন তাসকিন। সেখানে ডিফেন্ড করতে গিয়ে ব্যাটে লাগাতে পারেননি নিশাঙ্কা, বল সরাসরি তার প্যাডে লেগেছে। তাতে লেগ বিফোরের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার রিচার্ড কেটেলবোরো। যদিও বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায় মিস করে যেত লেগ স্টাম্প।
নিজের করা পরের ওভারেও উইকেট পেয়েছেন তাসকিন। এবার বাইরের দিকে বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা দিয়েছেন আভিষ্কা ফার্নান্দো। ক্যাচ জমা পড়েছে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। ৪ রানে এই ওপেনারকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ভালো শুরু এনে দেন তাসকিন।
১৫ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর সাদিরা সামারাবিক্রমাকে নিয়ে দলের হাল ধরেছিলেন কুশল মেন্ডিস। তবে সামারাবিক্রমা ১৪ রানের বেশি করতে পারেননি। এই ইনফর্ম ব্যাটারকে ফিরিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। সিরিজে প্রথমবার ম্যাচ খেলতে নেমে নিজের প্রথম ওভারেই উইকেটের দেখা পেয়েছেন এই বাঁহাতি পেসার।
মুস্তাফিজের মতোই প্রথম দুই ওয়ানডেতে একাদশের বাইরে ছিলেন রিশাদ হোসেন। আজ সুযোগ পেয়ে বল হাতে দুর্দান্ত শুরু করেন এই লেগ স্পিনার। নিজের প্রথম বলেই ফেরান উইকেটে সেট হওয়া কুশল মেন্ডিসকে।
ইনিংসের ১৮তম ওভারে প্রথমবার আক্রমণে আসেন রিশাদ। তার করা প্রথম বলটি অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরে পড়ে টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় খোঁচা দিয়েছিলেন কুশল মেন্ডিস। ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল চলে যায় মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। ২৯ রান করা মেন্ডিসকে ফিরিয়ে ওয়ানডেতে নিজের অভিষেক উইকেট পেলেন রিশাদ। এর আগে আরও দুই ওয়ানডে খেললেও ছিলেন উইকেট শূন্য।
টপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনে আরও একবার দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করার চেষ্টা করেছেন চারিথ আসালঙ্কা। ইনফর্ম এই ব্যাটার দেখে-শুনে খেলে উইকেটে থিতু হয়েছিলেন। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি। ২৫তম ওভার মুস্তাফিজের ব্যাক অব লেংথের বলে কাট করতে গিয়ে আউট সাইড এডজে মুশফিকের গ্লাভসে ধরা পড়েন এই ব্যাটার। সাজঘরে ফেরার আগে ৪৬ বলে ৩৭ রান করেছেন তিনি।
সাতে নেমে দলের বিপদের মুহূর্তে ব্যর্থ দুনিথ ভেল্লালেগে। এই বোলিং অলরাউন্ডার ১ রানে সাজঘরে ফিরে দলের বিপদ আরও বাড়িয়েছেন। ৩১তম ওভারে মিরাজকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিড উইকেটে সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়েন ভেল্লালেগে।
সুবিধা করতে পারলেন না ভানিন্দু হাসারাঙ্গাও। উইকেটে এসেই পাল্টা আক্রমণে ম্যাচের গতি পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন হাসারাঙ্গা। কিন্তু এক ছক্কায়ই শেষ হলো তার পাল্টা জবাব। ৩৫তম ওভারের প্রথম বলে ব্যাকফুটে জায়গা করে নিয়ে অফের দিকে খেলতে চেয়েছিলেন হাসারাঙ্গা, কিন্তু খানিকটা নিচু হওয়া বলে লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৮ বলে ১১ রান।
১৫৪ রানে ৭ ব্যাটারকে হারিয়ে দ্রুত অলআউটের শঙ্কায় পড়েছিল শ্রীলঙ্কা। তবে অষ্টম উইকেট জুটিতে মাহিশ থিকশানাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন লিয়ানাগে। থিকশানা ১৫ রান করে সাজঘরে ফিরলে ভাঙে ৬০ রানের জুটি। এটাই ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের জুটি। থিকশানা ফিরলেও আরেক প্রান্ত আগলে রেখে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন লিয়ানাগে। ১০১ বলে এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি। এটি তার অভিষেক সেঞ্চুরিও। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত ছিলেন ১০২ বলে ১০১ রান করে।