শ্রীমঙ্গলে বাগানের ফসলাদি লুটপাটের অভিযোগ এনে বুধবার শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনের পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন, বৃহত্তর সিলেট বিভাগীয় ত্রিপুরা উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলার সদর ইউনিয়নের দিলবরনগর এলাকাবাসীর পক্ষে নরেশ দেববর্মার ছেলে সুমন দেববর্মা।
এতে তিনি তার ও এলাকার গণ্যমান্যব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে উপজেলার শাহীবাগ এলাকার বাসিন্দা মৃত দিলবর মিয়ার ছেলে মো. আনোয়ার হেসেন কর্তৃক মিথ্যা গাছ কাটার অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়ে ১০ আদিবাসী পরিবারের বাগান দখলের আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
এর আগে ‘আনোয়ার হোসেন গত বুধবার শ্রীমঙ্গলে এক সংবাদ সম্মেলনে দিলবরনগর এলাকার মৃত লক্ষীরাম দেববর্মার ছেলে নরেশ দেববর্মা (৬২) এর নেতৃত্বে তার ছেলে সুমন দেববর্মা (৪০) ও শিমুল দেববর্মা (৩৮), হরিমন এর ছেলে রাজেশ দেববর্মাসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৩০-৩৫ জনের বিরুদ্ধে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বেআইনীভাবে প্রবেশ করে বাগানের পাহারাদারদের হাত-পা বেঁধে মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ করেন। এসময় বাগানে লাগানো সুপারী ও লেবু গাছ কেটে ফেলে এবং বাগানের লেবু ও আনারস লুটপাট করে নিয়ে যায়’ বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
আনোয়ার হোসেনের এমন অভিযোগকে সুমন দেববর্মা সংবাদ সম্মেলনে সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত দাবী করে বলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলার বালিশিরা পাহাড় ব্লক-২ বি আর এস দাগ নং- ৫৯৬ দাগে নিকটস্থ দাগের জনসাধারণের চলাচলের জন্য রাস্তা উল্লেখ রয়েছে। যার সিট নং-০৩, শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড জেরিন চৌমুহনা হতে বালিশিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৪নং খাসিয়া পুঞ্জির রাস্তা হতে সংযোগ সড়ক ৫৯৬ নং দাগ পর্যন্ত রাস্তা উল্লেখ রয়েছে, যার আরএস ম্যাপ বিদ্যমান রয়েছে। উক্ত রাস্তাটি শতবছরের পুরাতন। এটি একমাত্র রাস্তা ঘিরে যা আদিবাসী ত্রিপুরা, গারোসহ ১০টি পরিবারের যাতায়াত বসবাস এবং ১২ জন মালিকের লেবু, আনারস, কাঠাঁল বাগান রয়েছে।
সুমন অভিযোগ করেন, আনোয়ার হেসেন বিভিন্ন সময় রাস্তার মধ্যে ১ হাত, ২ হাত করে সুপারি গাছ লাগিয়ে ক্রমেই তার সীমানার ভেতরে রাস্তাটিকে প্রবেশ করিয়ে নেয়। এর ফলে রাস্তাটি সংকুচিত হতে থাকে। রাস্তার পার্শ্বে জায়গা থাকার সুযোগ নিয়ে রাস্তা সংকোচিত করে ভিতরে আদিবাসী ত্রিপুরা, গারোসহ বসবাসরত ১০টি পরিবার ও ১২ জনের লেবু, আনারস, কাঠাল এর বাগানগুলো দখল করাই তার উদ্দেশ্য। রাস্তা সংকোচিত করার ফলে বাগান মালিকগনের সার, গোবর নিয়ে গাড়ী প্রবেশ করতে পারে না। এতে করে লেবু, আনারস, কাঠাল শহরে নিয়ে আসার জন্য দীর্ঘপথ ঠেলাগাড়ী দিয়ে মেইন রোডে আনতে হয়।
গ্রামবাসী দীর্ঘদিন যাবত প্রতিবাদ করে কোন সুরাহা মেলেনি। জনসাধারণের চলাচলের জন্য ব্যবহৃত উক্ত রাস্তাটি আনোয়ার হেসেন এর অবৈধ দখলমুক্ত করতে গত ৭ জুন ১শ’ ৩৫জন গ্রামবাসীর স্বাক্ষরিত একটি আবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর জমা দেয় হয়। গ্রামবাসী রাস্তার বিষয়ে কোন সুষ্ঠু সমাধান না পেয়ে গত ১১ মার্চ মৌলভীবাজারের মাননীয় জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালত বরাবরে আনোয়ার হোসেনকে বিবাদী করে মোকদ্দমা দায়ের করে। মামলা নং-১৪/২৪ইং(স্বত্ব) যাহা বিচারাধীন রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মো. আনোয়ার হেসেন এর মরহুম পিতা দিলবর মিয়া এক সময়ে অত্র ইউনিয়নের স্বনামধন্য চেয়ারম্যান ছিলেন। পিতার এমন পরিচয় বহন করে মো. আনোয়ার হেসেন এলাকায় বিভিন্ন প্রকারের প্রভাব বিস্তার করে আসছে।
সুমন দেববর্মা বলেন, ‘আমরা নিরিহ আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাসিন্দা। সবসময় দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আছি। অথচ প্রতিপক্ষ আদিবাসী গ্রামবাসীকে অন্যায়ভাবে আইনি জটিলতায় জড়ানোর অসৎ উদ্দেশ্যে মিথ্যা তথ্য-উপাত্ত দিয়া সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
এসময় গ্রামের মুরুব্বি ও আদীবাসি পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।