পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখার সংবাদ পর্যালোচনা এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সোমবার (১১ মার্চ) জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যায় (বাদ মাগরিব) ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুবকর সিদ্দীক বলেন, জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি ও ধর্মমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আজ বাদ মাগবির রমজান মাসের শুরুর তারিখ ঠিক করতে বৈঠকে বসছেন। বৈঠকে জাতীয় জাতীয় চাঁদ দেখার কমিটির অন্যান্য সদস্যদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে দেশে আজ চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল মঙ্গলবার শুরু হবে রোজা। চাঁদ উঠলে আজ এশার পর থেকেই শুরু হবে তারাবির নামাজ। এ ছাড়া ভোররাতে সাহরি খেয়ে রোজা শুরু করবেন রোজাদাররা।
এর আগে সৌদি আরবে রবিবার (১০ মার্চ) দেখা গেছে রমজান মাসের চাঁদ। ফলে আজ সোমবার থেকে দেশটিতে শুরু হবে রমজান মাস। সৌদি আরবের সুপ্রিম কোর্ট গতকাল ওই ঘোষণা দেন বলে গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়।
এর আগে ওই আদালতের নির্দেশে স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৫টার পর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চাঁদের খোঁজ শুরু হয়। এ সময় চাঁদ দেখার জন্য খালি চোখের পাশাপাশি অত্যাধুনিক টেলিস্কোপও ব্যবহার করা হয়। গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় চাঁদের দেখা মেলে।
এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে আজ রোজা শুরু হবে।
অন্যদিকে সৌদি আরবে চাঁদ দেখা গেলে পরদিন বাংলাদেশেও সাধারণত দেখা যায়। সেই হিসাবে আজ চাঁদ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আগামীকাল এখানে রোজা শুরু হতে পারে।
এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে রোজা শুরু হবে বলে সেসব দেশের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
চাঁদ দেখে রোজা শুরু ও শেষ করার বিধান :
ইসলামের মৌলিক পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম রোজা। চাঁদ দেখে রোজা রাখতে হবে এবং চাঁদ দেখে ভাঙতে হবে, মানে শেষ করতে হবে। এটাই ইসলামি শরিয়তের বিধান। কোরআন-হাদিস দ্বারা প্রমাণিত আমল। রমজান মাসে প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নারী-পুরুষের রোজা রাখা ফরজ। এ ফরজ বিধানটি চান্দ্র মাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। আর আরবি মাসের গণনার শুরু ও শেষ হয় চাঁদের হিসাব অনুসারে। সুতরাং ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক চাঁদ দেখা বা না দেখার সঙ্গে রোজার শুরু এবং শেষ হওয়া সম্পৃক্ত। রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেলে রোজা রাখতে হবে এবং শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে রোজা ছাড়তে বা শেষ করতে হবে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেছেন, রমজান মাস- যাতে মানুষের জন্য হেদায়েত ও সত্য-অসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন নাজিল হয়েছে। তোমাদের মাঝে যে এই মাস (এই মাস শুরুর চাঁদ) প্রত্যক্ষ করবে, সে যেন রোজা রাখে। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
নিজে চাঁদ দেখা বা চাঁদ দেখেছে, এমন ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করা কিংবা শাবান মাস পূর্ণভাবে (৩০ দিন) অতিবাহিত করা ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো রমজানের রোজা পালন শুরু করতেন না। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘মানুষ সম্মিলিতভাবে চাঁদ দেখতে লাগল, তাদের মাঝে আমি রাসুল (সা.)-কে এসে সংবাদ প্রদান করলাম- আমি চাঁদ দেখেছি। এ সংবাদের ওপর ভিত্তি করে রাসুল (সা.) নিজে রোজা রাখলেন এবং সবাইকে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ২৩৪২)
কোনো কারণে চাঁদ দেখা না গেলে শাবান মাস পূর্ণ করে রমজান মাসের রোজা শুরু করতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখেই তা ভঙ্গ করো। চাঁদ দেখাকে অভ্যাসে পরিণত করো। যদি চাঁদ না দেখা যায়, তা হলে (শাবান মাস) ৩০ দিন পূরণ করো। যদি দুই ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রদান করে, তবে তোমরা রোজা রাখো এবং রোজা ভঙ্গ করো।’ (নাসায়ি, হাদিস: ২১১৬)
বর্তমানে অনেক কিছুই সহজ হয়ে গেছে। দুরবিন বা টেলিস্কোপের সাহায্যে চাঁদ অনুসন্ধান করতে অসুবিধা নেই। তবে এসব প্রযুক্তির ব্যবহার জরুরি নয়। কারণ, হাদিসের বাহ্যিক বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায়, স্বাভাবিক দৃষ্টির ওপর নির্ভর করাই যথেষ্ট। সম্মিলিতভাবে চাঁদ দেখা আবশ্যক। (মাজমুইল ফাতাওয়া, ১৯/৩৬-৩৭)
শাবানের ২৯ তারিখে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়ার কারণে যদি চাঁদ দেখা না যায় এবং কোথাও থেকে চাঁদ দেখার কোনো সংবাদ না আসে, তখন শাবানের ৩০ তারিখকে হাদিসের পরিভাষায় সন্দেহের দিন বলা হয়। এ দিন রোজা রাখাতে নিষেধ করা হয়েছে। রাসুল (সা.) সন্দেহের দিনে রোজা পালনের ব্যাপারে নিষেধ করে বলেছেন, ‘তোমরা রমজান আগমনের পূর্বে রোজা পালন করো না। চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে রোজা ভঙ্গ করো। যদি আকাশ মেঘে ঢেকে যায়, তবে ৩০ দিন পূর্ণ করো। (নাসায়ি, হাদিস: ২১৩০)
সুতরাং কোনো কারণে শাবান মাসের ২৯ তারিখে চাঁদ দেখা না গেলে বা আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় কোথাও থেকে নির্ভরযোগ্য কোনো সংবাদ পাওয়া না গেলে শাবান মাস ৩০ দিন পূরণ করার পর রোজা রাখতে হবে।