বাহান্ন’র একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় বন্দুকের নলের মুখে মিছিল নিয়ে রাজপথে বেরিয়েছিলো ছাত্র জনতা। সেই ঘটনাকে পুণঃদৃশ্যায়নের মাধ্যমে স্মরণ করতে প্রতি বছর একুশের দুপুর বেলা একটি নান্দনিক মিছিল বের হয় সুনামগঞ্জের রাজপথে। এই মিছিলের স্লোগান কোনো সাধারণ পরিচিত স্লোগান নয়। এই মিছিলের স্লোগান হয় কবিতার পংক্তিমালা৷
অডিটোরিয়ামের সজ্জিত মঞ্চ ও ড্রয়িং রুমের বন্ধ দরজার বাইরে বের হয়ে কবিতারা সরবে হাঁটতে থাকে রাজপথে৷ কবিতাকে পথে পথে ছুড়িয়ে দেবার এই কাজটি করে সুনামগঞ্জ শহরের দুই প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন সুনামগঞ্জ প্রসেনিয়াম থিয়েটার ও সত্যশব্দ সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের শিল্পী, কর্মী ও অভিভাবকেরা। এই মিছিলের নাম তারা দিয়েছেন “কবিতা মিছিল”।
চতুর্থ বারের মত সব হারার-সব পাওয়ার এই মিছিল সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। মিছিলের নেতৃত্ব দিয়ে শক্তিমান কন্ঠে কবিতা পাঠ করতে থাকে সত্যশব্দের প্রায় জনা শতেক শিশুশিল্পী। পাশাপাশি গলা মেলান প্রসেনিয়ামের নাট্য কর্মী ও অভিভাবকেরা। মিছিলের অগ্রভাগে স্লোগান ধরেন আবৃত্তি শিল্পী দেবাশীষ তালুকদার শুভ্র ও সত্যশব্দের প্রশিক্ষক দেবপ্রিয়া পাল।
স্বপ্নাদর্শ সাংস্কৃতিক সংগঠন,সুনামগঞ্জ কালচারাল ফোরাম ও বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরাও অংশগ্রহণ করেন৷ অংশ নেন কবি, সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষ।
সকলের কন্ঠেই উচ্চারিত হয় সলিল চৌধুরীর কবিতা “শপথ”, ইস্তেকবাল হোসেন এর ” আজ মিছিলে বন্যা হবে”, সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা “কারা যেনো আজ”।
কবিতায় যেমন উচ্চারিত থাকে ” এই মিছিল সব হারাবার, সব পাওয়ার”। মিছিলের ফেস্টুনের লেখাগুলোও যেনো তারই প্রতিচ্ছবি৷ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বাকস্বাধীনতা নিয়ে অসহায়ত্ব, সাম্প্রদায়িক শক্তির বাড়াবাড়ি সহ সময়ের সকল অসংগতির কথাই লেখা থাকে সেই ফেস্টুনগুলোতে।