সিলেটের জকিগঞ্জে গোলাম মোস্তফা চৌধুরী একাডেমির ৮ম শ্রেণির ছাত্র মোশাররফ আহমদ হত্যার ঘটনায় মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) অজ্ঞাতনামা আসামী দিয়ে মামলা রেকর্ড করেছে পুলিশ। নিহত মোশাররফ আহমদের বাবা মো. জামিল আহমদ চৌধুরী বাদী হয়ে অপহরণ, হত্যা ও গুমের অভিযোগে এ মামলা দায়ের করেন।
পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহত স্কুলছাত্রের শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। কয়েকটি বিষয়কে সামনে রেখে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে।
জকিগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুকান্ত চৌধুরী বলেন, ‘মোশাররফের লাশ দাফন শেষে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। নিহত স্কুলছাত্রের শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। ডিএনএ রিপোর্টের জন্য আলামত সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে।’
জকিগঞ্জ থানার ওসি জাবেদ মাসুদ জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে সন্দেহভাজন যে যুবকের কথা বলা হচ্ছে তাকে ঘিরেও তদন্ত চলমান রয়েছে। আরও কয়েকটি বিষয়কে সামনে রেখে রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ। দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে, স্কুলছাত্র হত্যার প্রতিবাদ দাবীতে ফুঁসে উঠেছেন এলাকাবাসী। সোমবার রাতে জকিগঞ্জ শহরে এওলাসার সমাজ কল্যাণ সংস্থার ব্যানারে মানববন্ধন, সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিক্ষুব্ধ জনতা।
জকিগঞ্জ পৌর শহরে মানবন্ধন শেষে সংস্থার সভাপতি ইমদাদুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফুর রহমান চৌধুরীর বক্তব্য রাখেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমএজি বাবর, উপজেলা কৃষকলীগ সভাপতি আব্দুল আহাদ, জকিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহসভাপতি রহমত আলী হেলালী, প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ আল হাছিব তাপাদার, এওলাসার সমাজ কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক লতিফ মাহমুদ চৌধুরী, নিহত স্কুল ছাত্রের চাচা শামিম আহমদ, ছাত্রলীগ নেতা আজহার আহমদ, রতনগঞ্জ টমটম সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিহাব উদ্দিন, ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল আলম রাহাত, জাতীয় পার্টি নেতা মর্তুজা আহমদ চৌধুরী, ইমরান আহমদ চৌধুরী, সুমন আহমদসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার শতশত মানুষ মিছিল ও মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে খুনিকে দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেফতারের আহবান জানান।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও খুনিকে গ্রেপ্তার না করলে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। নিরপরাধ স্কুলছাত্র নিখোঁজের পর লাশ পাওয়ার ঘটনায় অভিভাবকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের খুনি চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি নিশ্চিত করার দাবী জানান তারা। এই হত্যাকাণ্ডের সূত্রধরে যেন কোন নিরীহ নিরপরাধ মানুষ হয়রানীর শিকার না হন সেদিকেও প্রশাসনকে সর্তক থাকার আহবান জানান।
নিহত মোশাররফের চাচা শামিম আহমদ এক যুবককে ঘিরে তাদের সন্দেহ হচ্ছে। পুলিশের কাছে সেই তথ্য দেবেন। মুসরাব নিখোঁজের রাতে ওই যুবক ঘরের নাম্বারে কল দিয়ে ১৬ মিনিট কথা বলেছে এবং মোশারফকে সে জকিগঞ্জ কাস্টমঘাট এলাকায় দেখেছে বলে জানিয়েছে। আবার কাজলসার ইউপির চৌধুরী বাজার এলাকায় খোঁজখবর নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছে। এই যুবককে পরিবারের পূর্ব পরিচিত নয়। তাছাড়া সন্দেহভাজন আরও দুএকজনের বিষয়ে পুলিশকে মৌখিকভাবে তথ্য দেবেন।
উল্লেখ্য, অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মোশাররফ গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী নান্দিশ্রী গ্রামের ঈদগাহ মাঠে একটি ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে নিখোঁজ হয়। বিভিন্ন স্থানে সন্ধান করে তাকে না পেয়ে তার বাবা ওই দিন জকিগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। রোববার বিকেলে রতনগঞ্জ এলাকার বালাই হাওরের কুছির খালে তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।