প্রতিবারের মত এবারো নগরীতে বর্ণমালার মিছিলসহ নানা আয়োজনে মহান ভাষার মাসকে বরণ করেছে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট।
বেলা ১১টায় নগরীর সারদা হল প্রাঙ্গন থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনারে গিয়ে শেষ হয়। পরে ভাষার গান নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় আলেখ্যানুষ্ঠান।
বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি মায়ের ভাষার অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন সালাম, রফিক, জব্বারের মতো অসংখ্য মৃত্যুঞ্জয়ী বীর। আর সেই থেকেই শুরু মুক্তির সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসের। প্রেরণার এই ফেব্রুয়ারিকে তাই ঘটা করেই স্মরণ করেন সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীরা। এর অংশ হিসেবে সংস্কৃতিকর্মীরা সকালে বাংলা বর্ণমালার আদলে ফেস্টুন নিয়ে সিলেট নগরীর সারদা হল প্রাঙ্গণে সমবেত হন। একই সাথে শোভাযাত্রায় তরুণ প্রজন্মের অনেকে।
পরে শোভাযাত্রায় উপস্থিত হয়ে এর উদ্বোধন ঘোষণা করেন, সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান। এসময়, শোভাযাত্রায় যোগ দেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সবাইকে সাথে নিয়েই শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনারে গিয়ে শেষ হয়।
আয়োজকেরা বলেছেন, ভাষার মাসকে বরণের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম যেন বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্যকে লালন করে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় কাজ করে। ভাষা আন্দোলনের আদর্শ ও চেতনা তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেয়াই এ আয়োজনের মূল লক্ষ্য।
শোভাযাত্রা শেষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন, বাঙালি জাতি রাজপথে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে তাঁদের মাতৃভাষাকে রক্ষা করেছে। আজকে আমাদের মাতৃভাষাটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃত। বাংলা ভাষা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে গবেষণা হচ্ছে।
এসময় গর্বের এই বাংলা ভাষার শুদ্ধ চর্চা, বহুমাত্রিক প্রয়োগের তাগাদা দিলেন বিদগ্ধজনেরা। পাশাপাশি মাতৃভাষা চর্চা ও সকল জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষার অধিকার নিশ্চিতে প্রচেষ্টার কথা জানালেন জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান।
সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট প্রতিবছর ভাষার মাসকে বরণ করতে এই শোভাযাত্রার আয়োজন করে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভাষার জন্য রক্ত দিতে হয়েছে। ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষায় আমাদের নতুন প্রজন্ম বর্ণমালার প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধাবোধ থাকে, রক্তেরঞ্জিত বর্ণমালাকে যেন বুকে লালন করতে পারে সেই বোধ জাগাতেই এই বর্ণমালার মিছিল। আমরা চাই, স্কুল-কলেজ সর্বোত্র আমাদের ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে সবাই কাজ করে।
বায়ান্ন থেকে একাত্তর আমাদের যে সৃষ্টি সেই সৃষ্টিকে ধরে রাখা সকলের দায়িত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভাষার প্রতি আমাদের যে দায়িত্ববোধ আছে সেই দায়িত্ববোধটাকে নিয়ে যেন বিকৃতি থেকে আমাদের ভাষাটাকে আমরা রক্ষা করতে পারি তার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে’।