নারী থেকে পুরুষে রূপান্তরিত হতে গিয়ে নিজেকে অন্তঃসত্ত্বা জানলেন ইতালির এক নারী। দেশটির একটি হাসপাতালে জরায়ু অপসারণে অস্ত্রোপচার করতে গিয়েছিলেন তিনি। এ সময় তাকে ৫ মাসের গর্ভবতী বলে জানান চিকিৎসকরা।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) মাকির্ন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানা যায়।
বৃটিশ গণমাধ্যম টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই একটি স্তন অপসারণ করেছেন ওই নারী। এরপর জরায়ু অপসারণের জন্য রোমের ওই হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই চিকিৎসার সময় তার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি জানা যায়।
খবরটি প্রথম প্রকাশ করেছিল স্থানীয় সংবাদমাধ্যম লা রিপাব্লিকা। সংবাদমাধ্যমটিকে জিউলিয়া সেনোফন্তে নামের এক চিকিৎসক জানিয়েছে, ওই নারীর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি জানার পর আমাদের প্রথম কাজ ছিল অবিলম্বে তার হরমোন থেরাপি বন্ধ রাখা। কারণ এই অবস্থায় রূপান্তরকামী ওই নারীর ভ্রূণটি ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
সেনোফন্তে বলছিলেন, অবিলম্বে থেরাপি বন্ধ করা না হলে কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটতে পারে। বিশেষ করে গর্ভের প্রথম তিন মাস ঝুঁকিপূর্ণ। এটি শিশুর অঙ্গ বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়।
ওই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, যারা ট্রানজিশন বা রূপান্তর নিয়ে কাজ করছেন তারা সাধারণত রূপান্তরকামী নারীদের গর্ভনিরোধক বড়িগুলো সুপারিশ করেন। এগুলো হরমোন থেরাপির সময় ব্যবহার করা যেতে পারে।
পালমোর জেন্ডার ডিসফোরিয়া ক্লিনিকের এক পরামর্শদাতা মাতিল্ড ভিগনেরি বলেছেন, ইতালির আইনে শুধু ভ্রূণের গুরুতর ত্রুটি বা মায়ের একটি উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির ক্ষেত্রে ৯০ দিন পর গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে অস্বাভাবিক মাতৃত্বের মানসিক চাপ বিবেচনা করে একটি থেরাপিউটিক গর্ভপাতের অনুমতি দিতে পারে দেশটি।
লা রিপাবলিকা জানিয়েছে, সবকিছু জানার পর সন্তানকে পৃথিবীর মুখ দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওই নারী। তবে জন্মদাত্রী হিসেবে শিশুটির জৈবিক মা হলেও আইনগতভাবে ওই সন্তানের বাবা হিসেবে নিবন্ধিত হবেন তিনি।
তবে মাতিল্ড ভিগনেরি সতর্ক করে বলেছেন, এমনটি হলে সবার জন্য এটি বড় ধরনের একটি ধাক্কা হবে। এখানে এখনও সমকামী পরিবারগুলো তাদের অধিকার পায়নি। এর মধ্যে এ ধরনের বিশেষ পরিস্থিতিতে জন্ম নেওয়া একটি শিশুর অবস্থা কি হতে পারে কল্পনা করুন।
এদিকে রক্ষণশীল ক্যাথলিক ফাউন্ডেশন প্রো ভিটা ই ফ্যামিগ্লিয়ারের সভাপতি টনি ব্র্যান্ডি বলেছেন, ওই নারী তার থেরাপি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশাবাদী তিনি। সন্তানধারণের বিষয়টিকে লিঙ্গ তত্ত্বের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন টনি ব্র্যান্ডি। তার যুক্তি, এই ঘটনাটি একজন নারী যে শুধুই একজন নারী সেটিই প্রমাণ করে।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, জেন্ডার ফ্লুইডিটি থিওরিটি পাগলামি ছাড়াই কিছুই নয়। এটি বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে এবং এটি প্রকৃতিরও বিরুদ্ধে।
সময়ের সঙ্গে একজন ব্যক্তির মধ্যে লিঙ্গ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া অথবা লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে পরিবর্তন বিষয়ক তত্ত্বটি জেন্ডার ফ্লুইডিটি থিওরি হিসেবে পরিচিত।
যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি বেশ কিছু রূপান্তরকামী নারী সন্তান জন্ম দিলেও ইতালিতে এমন ঘটনা নজিরবিহীন।
তথ্যসূত্র : যুগান্তর