দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-৩ আসনে তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী জামানত হারিয়েছেন। তিনি জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জের ১৪৫টি কেন্দ্রের ফলাফলে মাত্র ৪ হাজার ৯৫ ভোট পেয়েছেন।
অপরদিকে, সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) আসনে ১৪৫টি কেন্দ্রের বেসরকারি ফলাফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী পরিকল্পনামন্ত্রী এম এম মান্নান নৌকা প্রতীকে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৯৮ ভোট বিজয়ের মালা পড়েন।
রোববার (৭ জানুয়ারি) সারা দেশে ভোট গণনা শেষে রাতে ফলাফল ঘোষণা করেন সুনামগঞ্জ জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা।
সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করলে এ শুন্য আসনে উপনির্বাচন ঘোষণা হয়। উপনির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট থেকে জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতা শাহীনুর পাশা চৌধুরী জয়লাভ করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে পদত্যাগ করেন দলটির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য শাহীনূর পাশা চৌধুরী। নিজের দল ছেড়ে তিনি তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেন।
জানা যায়, সুনামগঞ্জ-৩ আসনের (জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ) আসনের সাবেক এমপি শাহীনূর পাশার বাড়ি জগন্নাথপুর উপজেলার পাটলী গ্রামে। তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ছিলেন। দলের একজন নীতিনির্ধারক ছিলেন তিনি। শাহীনুর পাশা চৌধুরী সুনামগঞ্জ-৩ আসনে ২০০৫ সালের উপনির্বাচনসহ মোট পাঁচটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেন। এর মধ্যে চারবার বিএনপি-জামায়াতের জোটের প্রার্থী হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে। একবার নির্বাচন করেছেন নিজের দলের প্রতীক খেজুরগাছ নিয়ে।
এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সামাদ আজাদের মৃত্যুর পর ২০০৫ সালের উপনির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হন তিনি। উপনির্বাচনে তখন আওয়ামী লীগ অংশ নেয়নি। স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে ৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে ১৪ মাসের জন্য সংসদ সদস্য হয়েছিলেন শাহীনুর পাশা চৌধুরী। এম এ মান্নান পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ২০০৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে সুবাদে প্রধানমন্ত্রী তাকে তাঁর সরকারের অর্থ প্রতিমন্ত্রী ও পরবতীতে পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ফের তিনি এ আসনে নির্বাচিত হন।
এম এ মান্নানের সাথে শাহীনুর পাশার পুরনো ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এম এ মান্নানের কাছে ধরাশায়ী হলেও তিনি ৬৫ হাজার ৭৬৫ ভোট পান। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোট না আসলে শাহীনুর পাশা চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ফের এম এ মান্নানের কাছে ধরাশায়ী হলেও ৯২ হাজার ৯২৫ ভোট পান। কিন্তু ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এলে তাঁর ভোটের হিসেব বদলে যায়। এই নির্বাচনে তিনি মাত্র ৪ হাজার ৯৫ ভোট পেয়ে জামানত হারান।
নির্বাচনের বিধি অনুযায়ী কাস্টিং ভোটের ৮ ভাগের কম পেলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়। সে অনুযায়ী জামানত হারালেন তৃনমূল বিএনপি মনোনীত (সোনালী আঁশ) প্রতীক প্রার্থী এডভোকেটে মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভোটাররা জানান, সুনামগঞ্জ-৩ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরীর একটি ভোট ব্যাংক ছিল। কিন্তু অতি লোভে দল ও জোটের সাথে ডিগবাজি করে তৃণমূল বিএনপি থেকে নির্বাচন করে সাধারণ ভোটারের কাছে তিনি গ্রহণযোগ্যতা হারান। এ কারণে ভোটাররা তার প্রতি বিদ্বেষী ছিল। তাছাড়া বিএনপি-জামাত সমর্থিত ভোটারদের একটি বড় অংশ ভোট দানে বিরত ছিল। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারে কম।
ভোটাররা জানান, নির্বাচনের আগ থেকে শাহীনুর পাশাকে নিয়ে নেতিবাচক আলোচনা চলে ভোটারদের মাঝে। তাই ভোটে এর প্রভাব পড়ে। বর্তমানে তিনি রাজনৈতিক ছিন্ন মূলে পরিণত হয়েছেন।
এ ব্যাপারে সোমবার রাতে মাওলানা শাহিনুর পাশার সাথে মুটোফোনে আলাপ হলে তিনি বলেন, ‘যা ঘটেছে অবিশ্বাস্য। যা বলা হয়েছিল তা করা হয়নি। নির্বাচনের দিন বিকেল ২টার মধ্যেই সরকারী দলের লোকেরা আমার এজেন্ট দের ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি করা হয়। এটা নিয়ে পরে বিস্তারিত বলবো।’