সিলেট-৩ আসনে হাবিবের বিরুদ্ধে ডা. দুলালের যত অভিযোগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। তার আগেই ভোট কারচুপি ও নজিরবিহীন জালিয়াতির অভিযোগ করে নির্বাচন করেন, প্রধান প্রতিন্দ্বন্দ্বী প্রার্থী (স্বতন্ত্র) আওয়ামী লীগ নেতা ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল।

এ বিষয়ে তিনি সোমবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে সিলেট মহানগরের পূর্ব জিন্দাবাজারস্থ একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত অভিযোগ তুলে ধরেন।

ডা. দুলাল লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘সদ্য সমাপ্ত হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট (বালাগঞ্জ-দক্ষিন সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জ) আমি “ট্রাক” প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলাম। এই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, সন্ত্রাস ও জালিয়াতি ঘটেছে। নির্বাচনি প্রচার চলাকালে আমার কর্মীদের দেখে নেওয়ার হুমকি, ভোট কেন্দ্রে না যাওয়া, পোষ্টার লিফলেট ছিড়ে ফেলা, অভিবাবকদের হুমকি ইত্যাদি ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। যা নির্বাচনের পূর্বের কয়দিন বেশী মাত্রায় বেড়ে যায়।’

‘নির্বাচনের কয়েকদিন আগে নির্বাচনী এলাকায় কম্বল বিতরণ, স্কুলে অনুদানের প্রকাশ্য ঘোষণা, প্রার্থীর নিজ এলাকার প্রবেশমুখে তোরণ নির্মাণসহ নানা নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন অহরহ ঘটেছে এবং এগুলোর ফটো ও ভিডিও আমাদের কাছে। ফেঞ্চুগঞ্জের ঘিলাছড়ায় প্রকাশ্যে আমার সভায় হামলা, আমার সকল কর্মীদের আতংকিত করে তুলেছিল। নির্বাচনের আগের কয়েকদিন পুরো নির্বাচনী এলাকায় গরীব ভোটারদের কাছে নগদ টাকা বিতরণ ছিলো ওপেন সিক্রেট।’

এই সবগুলো বিষয় আমরা সময়ে সময়ে জেলা রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মৌখিক ও লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন জানিয়ে দুলাল বলেন, ‘আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনের কোন প্রতিনিধির কাছে এই ঘটনার কোনটিই নজরে আসেনি। তারা বিষয়টিকে হয় আমলে নেন নি অথবা না দেখার চেষ্টা করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের দিন দুপুর থেকেই শুরু হয় সন্ত্রাস আর জাল ভোটের মহাউৎসব। সকাল থেকেই আমার বিভিন্ন এজেন্টকে কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়া, কোন কোন জায়গায় ঢুকার পর বের করে দেওয়া, এনআইডি ছাড়া ভোটারদের ভোট দিতে না দেওয়া ইত্যাদির ঘটনা তিনটি উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘটতে থাকে।’

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ভোটার বহনকারী গাড়ীগুলোতে প্রার্থীর পোষ্টার না লাগানোর নির্দেশনা থাকলে ও এলাকার প্রায় সকল যানবাহনে প্রতিদ্বন্ধী নৌকার প্রার্থীর পোস্টার ছিল চোখে পড়ার মতো। দুপুর প্রায় সাড়ে ১২টায় বালাগঞ্জের বোয়ালজুড় বিদ্যালয় কেন্দ্রে আমার বালাগঞ্জ উপজেলা প্রচার কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মালেক সাহেব জাল ভোট প্রদানে বাধা দিলে স্থানীয় নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে মারাত্মক জখম করে আটকে রাখে ও অন্যান্য এজেন্টদের কেন্দ্রে থেকে বের করে দেয়।’

‘একই সময় বালাগঞ্জ উপজেলার বোয়ালজুড় ইউনিয়নের অন্যান্য কেন্দ্রে হামলা এজেন্টদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ ইত্যাদি ঘটতে থাকে। সোনাপুর কেন্দ্রে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে সকল এজেন্টকে বের করে নৌকার লক্ষে সীল মারার উৎসব শুরু হয়। আমি প্রিজাইডিং অফিসারদের অভিযোগ করি, সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে ফোনে জানাই এবং সংশ্লিষ্ট থানায় ও অভিযোগ করি । কিন্তু তাদের কার্যকরী কোন উদ্যোগ ছিলনা বিধায় পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেনি ।’

এরকম পরিস্থিতিতে দুপুর ২টা থেকে দক্ষিন সুরমা ও বালাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রাপ্তরা অসংখ্য টেলিফোনে কেন্দ্রের এজেন্টদের বের করে দেওয়া প্রিজাইডিং অফিসারের নিস্তব্ধতা ও নৌকার প্রার্থীর প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন, জালভোটে উৎসাহ প্রদান, নির্বাচন পরিচালনাকারীদের প্রচ্ছন্ন সহায়তায় নৌকার এজেন্টদের জালভোট প্রদান, ভয়ভীতি প্রদর্শন সহ অসংখ্য অভিযোগ করতে থাকেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান ডা. দুলাল।

তিনি আরও বলেন, ‘এমনকি একটি কেন্দ্রে আমার এজেন্ট লিখিত আকারে প্রিজাইডিং অফিসারকে অভিযোগ করলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি । প্রায় ৪৭ টি ভোট কেন্দ্রের আমার এজেন্টদের বের করে দিয়ে বিকেল ৩টার সময় নৌকার এজেন্টগন নির্বাচন পরিচালনাকারীদের সহায়তায় জাল ভোটের উৎসব শুরু করে । প্রতিকার না পেয়ে বিকাল প্রায় ৩.৪৫ মিনিটে আমি নির্বাচনী প্রতিদ্বন্ধীতা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেই এবং এই মর্মে একটি চিঠি প্রধান নির্বাচন বরাবর প্রেরন করি ।’

ডাক্তার দুলাল বলেন, ‘নির্বাচন পরবর্তী এখন পর্যন্ত আমার নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন কর্মীদের মারধর ও বাড়ী ছাড়ার ঘটনা ঘটেছে। আমি এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি। প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগন নির্বাচন কমিশনের সকল ঘোষনা ও শপথের প্রতি আস্থাশীল থেকে আমি প্রায় শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে ঠিকে থাকার চেষ্টা করেছিলাম।’

‘কিন্তু আমার প্রাক নির্বাচনী প্রচার, নির্বাচনের দিনের ঘটনা গুলো দেখে মনে হয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশন অফিসের নির্দেশনা স্থানীয় নির্বাচন অফিস প্রতিপালনে আগ্রহী কিংবা উদ্যোগী নন। কোন কোন ক্ষেত্রে স্থানীয় নির্বাচনী কর্মকর্তাদের আচরন সন্দেহজনক ও বটে। একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচন চলাকালীন এমন আচরনে সংক্ষুব্দ ও হতাশ।’

তিনি বলেন, ‘আমার নির্বাচনী আসনে এমন নির্বাচন পুরো নির্বাচনকেই ক্ষতিগ্রস্থ করবে এবং কমিশনের প্রতি ভোটারসহ দেশবাসীর আস্থার ভিত নড়বড়ে করে দিবে। আমি আমার এলাকার সকল মানুষকে শান্ত থাকার অনুরোধ করছি এবং বিষয় গুলো নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞ ও আমার নেতাদের পরামর্শ সাপেক্ষে পরবর্তী করনীয় নির্ধারন করবো।’