তিনি স্বপ্ন দেখাননি আকাশকুসুম, কিন্তু বলেছেন, স্থানীয়দের জীবনমান উন্নয়নের কথা। প্রতিশ্রুতি দেননি অসম্ভব কোনো কিছুর, তবে জানিয়েছেন, নির্বাচিত হলে যে উন্নয়ন করবেন তিনি, তা হবে বৈষম্যহীন, সুষম। এলাকা বা ব্যক্তি নয়, দেখা হবে স্থানীয়দের প্রয়োজন। মামলা-মোকদ্দমা দায়ের ও শালিশির নামে অযথা হয়রানি বন্ধ করবেন। এসব রোধে পালন করবেন অগ্রণী ভূমিকা। নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি তিনি মুসলিম উম্মাহের জন্য জাতীয়ভাবে নিরলস কাজ করবেন। অতীতের ভূমিকা রাখবেন অব্যাহত। সরকারের তল্পিবাহক হয়ে নয় বরং ঘটনমূলক আলোচনা-সমালোচনা করে জনগণের জন্য সংসদে লড়বেন তিনি।
কথাগুলো বলেছেন সিলেট-৫ আসনে (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) স্বতস্ত্র প্রার্থী মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জকিগঞ্জে শেষ নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দানকালে তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে নির্বাচিত করলে আমি শুধু বর্তমান নয় ভবিষ্যতের জন্যও কাজ করব। আমরা জানি, মানসম্মত শিক্ষানীতি না হলে সুশিক্ষিত জাতি গঠন সম্ভব নয়। আমরা যেমন দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে চাই তেমনি সরকারি অফিসে নৈতিক জ্ঞানসম্পন্ন জনবল চাই। তাই সুদ, ঘুষ ও দুনীর্তিমুক্ত জাতি গঠনে সুশিক্ষা নিশ্চিত করাই আমার অঙ্গীকার হবে। স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতিমুক্ত মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ নিশ্চিতে কাজ করব। আমার কাছে কোনো দলীয় ভেদাভেদ থাকবে না।
তিনি বলেন, ‘আমাকে যারা ভোট দেয়নি তাদের প্রতি দুনজর করব না। দলীয়কারণে কেউ হয়রানির শিকার হবে না। মিথ্যা মামলায় নির্যাতিত মানুষের পক্ষে আমাকে পাবেন। দান সদকার বিনিময়ে ভোট চাইতে আসিনি। মজলুম, নিপীড়িত মানুষের পক্ষে কাজ করা আমার পারিবারিক ঐতিহ্য। বিধবাভাতা, বয়স্কভাতা, প্রতিবন্ধীভাতা নিশ্চিত করতে কাজ করব। নব্বই বছর বয়সি কোনো মানুষকে বয়স্ক ভাতার জন্য জনপ্রতিনিধির দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হবে না।’
বৃহস্পতিবার জকিগঞ্জ পৌর শহরে কেটলি মার্কার নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তিনি। বিকেলে পৌর শহরের মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে এ জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশাল এ জনসভায় জামে মসজিদ মার্কেট থেকে শুরু করে এমএ হক চত্বর ছাড়িয়ে কলেজ রোড পর্যন্ত ছিল লোকে লোকারণ্য। গোটা জকিগঞ্জ উৎসব মুখর হয়ে ওঠে।
উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে আবেগ আপ্লুত বক্তব্যে মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী বলেন, নানা কারণে আগামী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচন নির্ধারণ করবে আগামী পাঁচ বছর জনগণের জানমানের নিরাপদ থাকবে কি থাকবে না। গরীব ও মজলুমের অধিকার নিশ্চিত হবে কি হবে না, তা নির্ধারণ করবে এই নির্বাচন। সমাজ সংস্কৃতি ও শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যতও নির্ধারণ করবে আলোচিত এই নির্বাচন।
তিনি বলেন, আমি ধর্মীয় একনিষ্টতার কারণে আমার কাজের কথা বলি না। অপপ্রচারের উত্তরে বলছি, গত ৫ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি শিক্ষানীতি নিয়ে। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসায় কোনো সরকারি অনুদান নেই। কথা বলেছি সেই বিষয়ে। সরকারি স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিনদের বেতন কাঠামো নিয়ে কথা বলেছি। এর আগে আমি ডারউইনের বিতর্কিত সৃষ্টিতত্ত্ব পাঠ্যবই থেকে বাতিল করিয়েছি। এটা কেবল ইসলাম নয়, হিন্দু মুসলিম সকলের ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা বাতিল হয়েছে। এবছর যে বই এসেছে, তাতেও সংশোধনীর প্রয়োজন আছে।
তিনি আরও বলেন, আমি মজলুম মানুষের পক্ষে কাজ করব। যারা সংসদে যাচ্ছেন না আমি তাদের পক্ষ হয়ে সংসদে কথা বলতে চাই। আমি যাদের সমর্থন পাচ্ছি তাদের কথা বলব, যাদের সমর্থন পাচ্ছি না আমি তাদের জন্যও কথা বলব। বিগত ১৫ বছর আমি ক্ষমতার কাছাকাছি ছিলাম। কোনো মানুষ তো দূরের কথা আমার দ্বারা কোনো প্রাণীও কষ্ট পায়নি।
দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা ইচ্ছা থাকলে অনেক দল আমাকে তাদের প্রতীক দিত। দলীয় প্রতীক নিলে আমি দলের কাছে দায়বদ্ধ হয়ে যাব। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদে গেলে সকল অধিকার নিয়ে কথা বলা যাবে। আমি সবচেয়ে হয়রান প্রার্থী। সবাই আমার দিকে তীর ছুঁড়ছেন। আমি কোনো সরকারি সংস্থার সহয়তা নিচ্ছি না। আমার শান্ত প্রকৃতির কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য কোনো বাহিনী কাজ করলে আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার কর্মীদের প্রতি নির্দেশ থাকবে সব অবস্থায় আদর্শ বজায় রেখে কাজ করবেন। নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে। কোনো বিশৃঙ্খলা হবে না ইনশাআলাহ।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাব্বির আহমদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে আমাকে সমর্থন জানিয়েছেন। একটা গুজব এসেছে আমি পাশ করলে তাবলীগ জামাত বন্ধ করতে কাজ করব। আপনারা জানেন, জকিগঞ্জের তাবলীগ মারকাজ আমার বাড়ির গেইট আটগ্রাম স্টেশনে। মারকাজটি এখানেই নিরাপদ আছে। আমার কাছে সকল দলমতের মানুষ নিরাপদ বিবেচিত হবে।
হুছামুদ্দীন চৌধুরী বলেন, আমি নির্বাচিত হলে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানে কাজ করব। জকিগঞ্জ সরকারি কলেজে অনার্স কোর্স চালু হবে। ইউনিয়ন ভিত্তিক হসপিটাল স্থাপন করা পরিকল্পনা আমার রয়েছে।
নির্বাচনী এ সভায় সভাপতিত্ব করেন হান্নানিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. আব্দুল হান্নান।
পৌর আল ইসলাহ সম্পাদক সেলিম আহমদের পরিচালনায় শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পৌর সভাপতি কাজী হিফজুর রহমান।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ইউকে দারুল হাদীস লতিফিয়ার প্রিন্সিপাল মাহমুদ হাসান চৌধুরী, সিলেট মহানগর ইমাম সমিতির সভাপতি শিহাব আহমদ, জাতীয় পার্টি ও বণিক সমিতি নেতা ওলিউর রহমান, সিলেট জেলা জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির আহ্বায়ক রিমন আহমদ চৌধুরী, উপজেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ময়নুল ইসলাম মনু, কওমী নেতা আফতাবুদ্দীন নোমানী, পূজা উদযাপন কমিটির নেতা শ্রী আশু বাবু, যুবলীগ নেতা শামীম আহমদ, ৩নং কাজলসার ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী নেতা আশরাফুল আম্বিয়া, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আতাউর রহমান, উপজেলা আল ইসলাহ সাধারণ সম্পাদক কুতবুল আলম প্রমুখ।