হবিগঞ্জ-১ : সমঝোতা হলেও স্বস্তিতে নেই জাপা!

প্রবাসী অধ্যুষিত সমতল-পাহাড়, হাওর আর চা বাগান বেষ্টিত হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশীল ঘোষণার পর থেকেই নানামূখী আলোচনা এ আসনের নির্বাচন ঘিরে। নানা আলোচনা-সমালোচনা আর নাটকীয়তার পর শেষ পর্যন্ত এ আসনে জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা। প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা।

আসনটিতে নৌকা প্রতীক পেয়ে চমক দেখিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী। তবে পরে জাতীয় পার্টির সাথে সমঝোতায় এসন থেকে প্রার্থী সরিয়ে দেয় ক্ষমতাসীন দলটি। তবে এতেও স্বস্তিতে নেই এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু (লাঙ্গল)। কারণ ভোটের মাঠে তার জন্য শক্ত চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছেন তার সঙ্গে সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। হেভিওয়েট এই প্রার্থীই পাল্টে দিতে পারেন ভোটের হিসেব নিকেশ।

এছাড়া দলীয় কোন্দল, সাংগঠনিক নির্লিপ্ততাসহ বহু সমস্যায় জর্জরিত জাতীয় পার্টির বর্তমান অবস্থা অনেকটাই নড়বড়ে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় রেষারেষি। ইতিমধ্যেই নিজ দলের প্রার্থীকে বাদ দিয়ে আনুষ্ঠাকিভাবে জাতীয় পার্টির রওশন পন্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী কেয়া চৌধুরীর পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। সবমিলিয়ে বেশ বেকায়দায় রয়েছে জাতীয় পার্টি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী কেয়া চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরীর সন্তান হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ সমর্থক গোষ্ঠীর কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন। নবীগঞ্জ ও বাহুবলে তার বড় একটি সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে। সাধারণ জনগণের কাছে রয়েছে তার তুমুল জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা।

ভোটাররা বলছেন, এ দুই প্রার্থীকে ঘিরেই এ আসনে বইছে নির্বাচনী আমেজ। হাট বাজার ও চায়ের স্টলে ভোটাররা করছেন চুলচেরা বিশ্লেষন। দিন যত যাচ্ছে প্রার্থীরা নিজেদের ভোটের সংখ্যা ভারী করে তুলছেন।

ইতিমধ্যে নবীগঞ্জ ও বাহুবল দুটি উপজেলাতেই প্রধান সড়ক, হাট বাজার এবং চায়ের দোকান ছেয়ে গেছে পোস্টার ও ব্যানারে। পাশাপাশি প্রতিদিন প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। নিজের জয় নিশ্চিত করতে ভোটারদের দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের মধ্যে চলছে তীব্র প্রতিযোগীতা।

কেয়া চৌধুরীর সমর্থকরা জানান, তাদের প্রার্থী সংরক্ষিত আসনের এমপি হয়েও এলাকার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হলে এ আসনের চিত্র বদলে দিতে পারবেন তিনি। এসব কারণে দলমত নির্বিশেষে তাকে ভোট দিবেন সচেতন ভোটাররা।

তারা জানান, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাই দলীয় লোকজনও তাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি কেয়ার নির্বাচনে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে বলে তাদের বিশ্বাস।

অপরদিকে লাঙ্গলের প্রার্থীর সমর্থকরা জানান, এর আগে তাদের প্রার্থী সংসদ সদস্য থাকাকালীন এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছেন। এ ছাড়া জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার জন্য একাট্টা হয়ে কাজ করছেন। আওয়ামী লীগে স্থানীয়ভাবে মতবিরোধ থাকলেও এ নির্বাচনে তারা এক হয়ে লাঙ্গলের বিজয়ের জন্য কাজ করছেন। তাই বিপুল ভোটে তাদের প্রার্থী বিজয়ী হবে বলে তারা আশাবাদী।

এ আসনে এ দুইজনের পাশাপাশি নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী মোহাম্মদ শাহেদ (ট্রাক), ইসলামি ঐক্যজোট বাংলাদেশের মোস্তাক আহমেদ ফারহানী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মো: নুরুল হক (গামছা) প্রতিক।

১টি পৌরসভা ও ২০টি ইউনিয়নের এ আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ৩১ হাজার ১শ’ ৮৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ১৭ হাজার ৯শ’ ৪২, নারী ভোটার ২ লাখ ১৩ হাজার ২শ’ ৪১ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ২ জন। নবীগঞ্জে ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর সভায় মোট ১১৬টি কেন্দ্র এবং বাহুবল উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নে ৬১ টি কেন্দ্র রয়েছে।