দুর্গম হাওরের কনকনে শীতেও ভোটের উত্তাপ

প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে ভোটের মাঠে আটঘাট বেঁধে প্রচারণায় নেমেছেন প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। পৌষের কনকনে শীতে রাত-বিরাতে চষে বেড়াচ্ছেন হাওর এলাকার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত, গ্রামে গ্রামে উঠান বৈঠক আর মিছিল-মিটিং এ ভোটের উত্তাপ। ভোটাদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে শোনাচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি। সকাল থেকে মধ্য রাত অবধি ছুটে চলা শত শত মোটরসাইকেলের হর্ণের শব্দের সঙ্গে হ্যান্ডমাইক দিয়ে কর্মী-সমর্থকদের স্লোগানে-স্লোগানে ভোটের উত্তাপ ভালই টের পাচ্ছেন হাওর জনপদ খ্যাত সুনামগঞ্জ-১ আসনের ভোটাররা।

ভোটার সংখ্যা ও আয়তনে জেলার সবচেয়ে বড় আসন এটি। জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর এ চার উপজেলা নিয়ে এই আসন। এখানে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকে ভোটে লড়ছেন রনজিত চন্দ্র সরকার। তিনি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। অপরদিকে নৌকার বিপক্ষে জোর প্রতিদ্বন্দিতার আভাস দিচ্ছেন খোদ আওয়ামী লীগেরই দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী। তারা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সেলিম আহমদ। সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন নৌকার ভাগ্য এই দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিম আহমদকে লটারিতে ঈগল প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয় এবং মোয়াজ্জেম হোসেন রতন পান কেটলি। মোয়াজ্জেম হোসেন রতন টানা তিনবারের এমপি হয়েও এবার মনোনয়ন বঞ্চিত। মনোনয়ন না পেয়ে প্রথমদিকে ভোটের মাঠে কিছুটা ধীরগতিতে চললেও প্রতীক পেয়েই জোরেশোরে প্রচারে নেমেছেন তিনি।

অন্যদিকে সেলিম আহমদ এর কর্মী-সমর্থকদের মাধ্যমে আগে থেকেই গুঞ্জন ছিল তিনি নির্বাচনে লড়বেন। তাছাড়া বিগত দিনে এই আসনে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড মানুষের সামনে তুলে ধরা ও তাঁর সামাজিক-রাজনৈতিক নানামুখী কর্মকান্ডই জানান দিচ্ছিল তিনি ভোটে নামছেন। শেষ পর্যন্ত তিনিও ভোটে লড়ছেন।

প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে প্রথম দিনেই এই তিন প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা মিছিল-শোডাউনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়।

এরপর থেকে প্রতিদিনই তাদের কর্মী-সমর্থকরা নাচে-গানে ও পাল্টাপাল্টি মিছিল-শোডাউনে এক ধরনের ভোট উৎসবের আমেজ তৈরি করেছে। নির্বাচনে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি না থাকলেও এই তিন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের এতসব কর্মকান্ড এখানে নির্বাচনের উত্তাপ ছড়িয়েছে। সকাল থেকে মধ্য রাত অবধি দুর্গম হাওরের নানা প্রান্ত চষে বেড়াচ্ছেন তারা। গ্রামের হাট-বাজারগুলোতে প্রার্থীদের পক্ষে মাইকে ভেসে বেড়াচ্ছে মুখরোচক সব গান। কখনো ভর দুপুরে আবার কখনো সন্ধ্যার পর কর্মী-সমর্থকদের স্লোগানে-স্লোগানে মিছিলে মুখর হয়ে উঠে স্থানীয় বাজারগুলো ও তার আশপাশ এলাকা।

তবে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ও সাবেক ছাত্রনেতা বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সেলিম আহমদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটে না নামলে এতটা উত্তাপ ছড়াত না বলে মনে করছেন এখানকার সাধারণ ভোটারদের একটি অংশ। তাই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ ও ভোট উৎসব আবহ তৈরির পেছনে এ দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভূমিকাকে অন্যতম হিসেবে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা। যেকারণে নৌকার প্রার্থীকে পূর্ণ শক্তি নিয়েই মাঠে থাকতে হচ্ছে। আর এমন আলোচনায় এখন সরগরম পাড়ার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে হাওর জনপদের সর্বত্র।

শেষ পর্যন্ত নৌকা নাকি স্বতন্ত্রের বাজিমাত তা দেখতে ভোটের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তবে ভোটের লড়াই যে জমে উঠেছে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠ থেকে এমনই আভাস মিলছে।