শান্তিগঞ্জে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত জুনু মিয়ার বাড়িতে শোকের মাতম

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের ঘোড়াডুম্বুর গ্রামে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত জুনু মিয়ার (৩২) বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে হৃদয় বিদারক ঘটনার সৃষ্টি হয় গ্রামব্যাপী। পুত্রশোকে মা মনোয়ারা আর স্বামী হারিয়ে স্ত্রী মাজেদা বেগম বার বার কান্নায় মূর্ছা যাচ্ছেন। বাবাকে হারিয়ে কাতর হয়ে পড়েছে অবুঝ দুই শিশু কন্যা তাসরিন (৩) ও তান্নি (৮)। বৃদ্ধা মা মনোয়ারা বেগমসহ অন্যান্য আত্মীয়ের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে ঘোড়াডুম্বুর গ্রামের শান্ত পরিবেশ।

শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় ঘোড়াডুম্বুর হাফিজিয়া দাখিল মাদরাসার মাঠে জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় নিহত জুনু মিয়াকে।

শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লোকে লোকারন্য নিহত জুনু মিয়ার সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়িতেই দুই শিশু কন্যা, স্ত্রী ও মাকে নিয়ে থাকতেন জুনু। পেশায় একজন ট্রলি চালক ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েছে পরিবারটি। পুত্রশোকে মায়ের বুকফাটা আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছিলো চারপাশের পরিবেশ। স্বামীকে হারিয়ে শোকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তার স্ত্রী। কাঁন্নায় ভেঙে পড়েছেন তার অবুঝ দুই শিশু।

জানা যায়, সংঘর্ষের ঘটনায় ঘোড়াডুম্বুর গ্রামের মৃত চমক আলী মেম্বারের ছেলে আদনান হোসেন, আলী হোসেন, মৃত রজন আলীর ছেলে হারুন রশিদ ও আবদুল গফরের ছেলে রিমনসহ ৪৭ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৩৫ থেকে ৪০ জনের বিরুদ্ধে ছয়গোষ্ঠীর পক্ষে একটি মামলা দাযের করেন কাজি আহাদ মিয়ার ছেলে কাজি আবদুল ওয়াদুদ। মামলায় বন্দুক দিয়ে হামলা করার অভিযোগ করেন তারা। সংঘর্ষের দিন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন জুনু মিয়া। এই গুলির কারণেই তিনি নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন জুনু মিয়ার আত্মীয়স্বজন ও ছয়গোষ্ঠী পক্ষ। নিহত জুনু মিয়া ছাড়াও তাদের পক্ষের ৩০ থেকে ৩৫ জন লোক গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে দাবি করেছেন মো. নূর মিয়া। একজন নিহত হওয়ায় নতুন করে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

নিহত জুনু মিয়ার স্ত্রী মাজেদা বেগম কাতর কণ্ঠে দাবি করেন, গুলি করে আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছে হাজিবাড়ির গোষ্ঠীর লোকজন। আমি প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচার চাই। খুনের বদলে খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই। বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন জুনু মিয়ার মা মনোয়ারা বেগম। তিনি বিলাপ করে বলেন, আমার সন্তানের খুনিদের ফাঁসি চাই।

আরও পড়ুন : শান্তিগঞ্জে সংঘর্ষের পাঁচ দিন পর আহত একজনের মৃত্যু

ছয়গোষ্ঠীর পক্ষে মো. নূর মিয়া, আকিক মিয়া, নবী হোসেন ও আরজদ আলী বলেন, আদনান, আলী ও হারুন রশিদসহ একটি গোষ্ঠী আছে যারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে অস্ত্র নিয়ে মারামারি করে, মার্ডার ঘটায়। এর আগে আরো মার্ডার করেছে তারা। ঘটনার দিন তারা বন্দুক বের করে আমাদের লোকদের উপর গুলি ছুঁড়েছে। এই গুলিতেই জুনু মিয়া নিহত হয়েছেন। তার কপালে, মাথার একপাশে একাধিক গুলি আছে। আমরা হত্যা মামলা করবো। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ এখনো হাজি গোষ্ঠীর লোকদের বাড়িতে অস্ত্র আছে, বন্দুক আছে। আপনারা দয়া করে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করুন।

শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজি মুক্তাদির হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে ঘোড়াডুম্বুর গ্রামে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আমরা আসামীদের ধরতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। যদি অস্ত্র থেকে থাকে তবে তা উদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।