পুরো নভেম্বর মাসজুড়েই ছিল বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা হরতাল ও অবরোধ। শুক্র ও শনিবার বাদে সপ্তাহের মাত্র এক কর্মদিবস ছিল এসব কর্মসূচির আওতামুক্ত। তারপরও এ মাসে দুর্ঘটনার কমতি ছিল না।
নভেম্বরে সারা দেশে সড়ক, নৌ ও রেলপথে মোট ৬০৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৫০৩ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৬৩০ জন। দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৫৬৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জন নিহত এবং ৬০৫ জন আহত হয়েছেন। একই সময় রেলপথে ৩১টি দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হয়েছেন এবং নৌ-পথে ৬টি দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত ও একজন নিখোঁজ রয়েছেন।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর পাঠানো এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ-পথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংগঠনটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত নভেম্বর মাসে ১৪৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭৩ জন নিহত ও ৮৫ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ২৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ, নিহতের ৩০ দশমিক ৫৬ শতাংশ ও আহতের ১৫ দশমিক ০১ শতাংশ। এ মাসে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১১৫ জন নিহত ও ১৩৮ জন আহত হয়েছে। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে সিলেট বিভাগে। এ বিভাগে ২২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত ও ২৬ জন আহত হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ২১ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৩৩ জন চালক, ৫৪ জন পথচারী, ২০ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬৭ জন শিক্ষার্থী, ৩ জন শিক্ষক, ৬৪ জন নারী, ৪৪ জন শিশু, ২ জন সাংবাদিক, ২ জন চিকিৎসক, ১ জন আইনজীবী, ২ জন প্রকোশলী, ১ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং ১২ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। এদের মধ্যে নিহত হয়েছে- ৪ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন চিকিৎসক , ২ জন সাংবাদিক, ১ জন আইনজীবী, ১ জন মুক্তিযোদ্ধা, ২ জন প্রকোশলী, ১০৬ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৪৫ জন পথচারী, ৫১ জন নারী, ৩২ জন শিশু, ৩৬ জন শিক্ষার্থী, ১৩ জন পরিবহন শ্রমিক, ৩ জন শিক্ষক ও ৭ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী নভেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হচ্ছে- ট্রাফিক আইনের অপপ্রয়োগ, দুর্বল প্রয়োগ, ট্রাফিক বিভাগের অনিয়ম দুর্নীতি ব্যাপক বৃদ্ধি, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার যানের ব্যাপক বৃদ্ধি ও এসব যানবাহন সড়ক মহাসড়কে অবাধে চলাচল, সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কে বাতি না থাকা ও রাতের বেলায় ফগ লাইটের অবাধ ব্যবহার, চলতি বর্ষায় সড়ক মহাসড়কের ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়া, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা, উল্টো পথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি এবং অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো।
সংস্থাটির দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশগুলো হচ্ছে- জাতীয় নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি ইশতেহারে সড়ক নিরাপত্তা ও স্মার্ট গণপরিবহন গড়ে তোলার বিষয়ে অঙ্গীকার রাখা, মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মতো ছোট ছোট যানবাহন আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস প্রদান, রাতের বেলায় বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চালকদের রিফ্লেক্টিং ভেস্ট পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করা, সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্ম ঘণ্টা সুনিশ্চিত করা, রাতের বেলায় চলাচলের জন্য জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে পর্যাপ্ত আলোক সজ্জার ব্যবস্থা করা, চলতি বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার মাঝে সৃষ্ট ছোট বড় গর্ত দ্রুত অপসারণ করা এবং গণপরিবহন বিকশিত করা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেইফটি অডিট করা।