বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে সিলেট, ঢাকা ও চট্টগ্রাম

বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের উত্তরপূর্ব সীমান্তবর্তী জেলা সিলেট। এছাড়া অতি ঝুঁকিতে আছে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামও। বিশেষজ্ঞদের মতে রিখটার স্কেলে ৭ কিংবা এর বেশি মাত্রায় ভূমিকম্প হলে ভয়াবহ বিপর্যয় হতে পারে এই তিন নগরীতে। এজন্য বড় দুর্যোগের আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে হবে।

চলতি বছরে দেশব্যাপী এ পর্যন্ত ১২টি হালকা ও মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। সর্বশেষ শনিবার ঢাকাসহ সারা দেশে ৫ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর উৎপত্তিস্থল লক্ষীপুরের রামগঞ্জে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ছোটখাটো ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের আভাস দেয়।

গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বড় ভূমিকম্প হওয়ার মতো দুটি উৎস রয়েছে। এর একটি হচ্ছে ডাউকি ফল্ট, অন্যটি সাবডাকশন জোন। সাবডাকশন জোনটি উত্তরে সিলেট থেকে দক্ষিণে কক্সবাজার, টেকনাফ পর্যন্ত। সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো এ সাবডাকশন জোন। এই জোনে ৮০০ থেকে এক হাজার বছরে কোনো বড় ভূমিকম্প হয়নি। এর দক্ষিণে টেকনাফ থেকে মিয়ানমার অংশে ১৭৬২ সালে ৮ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। সেই ভূমিকম্পে সেন্টমার্টিন ডুবন্ত দ্বীপ তিন মিটার উপরে উঠে আসে। তাছাড়া সীতাকুণ্ড পাহাড়ে কাদাবালুর উদ্গিরণ হয়।

ভূতত্ত্ববিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অবজারভেটরির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, শনিবার হলো রামগঞ্জে, পাঁচ মাস আগে হয় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। এগুলো তো সাবডাকশন জোনের মধ্যে। এখন সাবডাকশন জোনের যে কোনো জায়গায় ভূমিকম্প হওয়ার মানে হচ্ছে বড় ভূমিকম্প হওয়ার পূর্বলক্ষণ।

তিনি বলেন, সাবডাকশন জোন সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ হাওড় হয়ে মেঘনা নদী দিয়ে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে চলে গেছে। এ রেখা ভারতের প্লেট, যেটা পশ্চিমে অবস্থিত। সেটি পুবের যে পাহাড়ি অঞ্চল, এর নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। এই জোনে যে বিপুল শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে তাতে ৮ দশমিক ২ থেকে ৮ দশমিক ৯ মাত্রা পর্যন্ত ভূমিকম্প হতে পারে। সিলেট থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এ বেল্টে যে কোনো জায়গায় যে কোনো সময় ভূমিকম্প হতে পারে। তিনি বলেন, বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ১০-১২ বছরের মধ্যে যে কোনো সময় বড় ভূমিকম্প হতে পারে। ভূমিকম্প হলে অনেক ফায়ার স্টেশনও অচল হয়ে যাবে। পুরান ঢাকার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ভূমিকম্প হলে এসব ঘিঞ্জি এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কার্যক্রম চালানোরও কোনো সুযোগ থাকবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো এখনই ভূমিকম্প সহনীয় করতে হবে। ধীরে চলো নীতি ভূমিকম্প দুর্যোগের ক্ষেত্রে চলবে না। ভূমিকম্প হতে পারে ধরে নিয়েই স্থাপনা তৈরি করতে হবে। সরকারের উচিত হবে বিল্ডিং কোড আপডেট করা। বিল্ডিং কোড মেনে ভবন তৈরিতে মানুষকে বাধ্য করতে হবে। থাকতে হবে সচেতনতাও।

 

সূত্র : যুগান্তর