বালাগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা মোখলেসুর রহমানের পৈতৃক সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য পাঁয়তারা করছে একটি মহল। সেই সাথে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদের জন্য হামলা-মামলা সহ দুস্কৃতিকারী লোকদের দিয়ে নানাভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।
সিলেটে জেলা প্রেসক্লাবে শনিবার অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন মোখলেসুর রহমানের চাচাতো ভাই রুহুল কুদ্দুস বাবলু।
লিখিত বক্তব্যে বাবলু বলেন, বালাগঞ্জের দেওয়ানবাজার ইউনিয়নের সিরাজপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোখলেসুর রহমান ১৯৯২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার দুই ভাই মৃত ফজলুর রহমান ও মৃত শফিকুর রহমান। তাদের বাবা মৃত মুহিবুর রহমান। ১৯৯০ সালে মুহিবুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৯২ সালে বালাগঞ্জে জরিপ কাজ শুরু হয়। সিরাজপুর মৌজায় জরিপ কাজ চলাকালে মোখলেসুর রহমানের মৃত্যু হয়। তখন তার ভাই শফিকুর রহমানের বড় ছেলে ওহিউর রহমান (১৭) গৃহস্থালির দায়িত্ব নেন। মোখলেসুর রহমানের বড়ভাই লন্ডন প্রবাসী ফজলুর রহমান তখন দেশে আসেন। জরিপ কাজ সম্পন্ন করে তিনি আবার লন্ডন চলে যাওয়ার সময় তার ভাতিজা ওহিউর রহমানকে সমস্ত জমির চাষাবাদ ও গৃহস্থালির দায়িত্ব দিয়ে যান। পরে ওহিউর রহমান যুক্তরাজ্য চলে গেলে তার ছোটভাই ওলিউর রহমানকে এই দায়িত্ব দিয়ে যান। পরবর্তীতে ওলি স্পেন চলে গেলে মোখলেসুর রহমানের ছোট ছেলে অভিউর রহমান অভি তাদের সব জায়গাজমি চাষাবাদ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পান।
তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোখলেসুর রহমানের ভাই মৃত ফজলুর রহমানের স্ত্রী যুক্তরাজ্য প্রবাসী আমেনা খাতুন হেনা তার শ্বশুড়-শাশুড়ির সমস্ত সম্পত্তি নিজের মালিকানা দাবি করে সৎভাই আলতাবুল ইসলামের মাধ্যমে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই জনৈক এনামুল হককে ভুয়া আমমোক্তার সাজিয়ে মোখলেসুর রহমানের ছেলে মাহবুব আলম রেজভী, মোখলেসুর রহমানের চাচাতো ভাই লুৎফুর রহমান খসরু, রুহুল কুদ্দুস বাবুলসহ আরও কয়েকজনকে বিবাদী করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, সিলেট-এ একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আদালতের নির্দেশে বালাগঞ্জ থানা তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দেয়।
প্রতিবেদনে মামলার বিষয়বস্তু মিথ্যা উল্লেখ করে জায়গায় মখলিসুর রহমানের ছেলে ওহিউর রহমানদের ৩০/৩৫ বছরের যৌথ দখল বিদ্যমান বলা হয়। পরে আদালত মামলাটি খারিজ করে নির্দেশনা দেন এব্যাপারে দেওয়ানী আদালতে বাটোয়ারা মামলা করার জন্য।
বাবলু বলেন, এর পর লক্ষ্য করা যায় যে মৃত ফজলুর রহমান তৎকালীন সময়ে বিএস জরিপকারী দুর্নীতিবাজ মাঠ কর্মকর্তাদেরকে ঘুষ দিয়ে তার বাবা মৃত মুহিবুর রহমান ও মা তৈয়বুন্নেসার সমস্ত জমি নিজের নামে রেকর্ড করিয়ে নেন। এমনকি কবরস্থানেও তার ভাই মুক্তিযোদ্ধা মোখলেসুর রহমানের নাম রাখেননি।
বাবলু বলেন, আমার আরেক চাচাতো ভাই লুৎফুর রহমান খসরুর কিছু জমি ফজলুর রহমান ভুয়া দলিল করে তার নামে বিএস রেকর্ড করিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন, মে মাসে ফজলুর রহমানের স্ত্রী তার সন্তানদের নিয়ে গোপনে দেশে আসেন এবং তার সৎভাই দক্ষিণ সুরমার মোল্লারগাঁওয়ের আলতাবউল ইসলামকে সমস্ত জমি আমমোক্তারনামা দিয়ে চলে যান। পরে আলতাবউল ইসলাম একই গ্রামের লতিফকে সমস্ত ধানি জমি বর্গা দেন। পরবর্তিতে চিহ্নিত ডাকাত লতিফ নানাভাবে হয়রানি করে মোখলেসুর রহমান ও শফিকুর রহমানের পরিবারকে।
বাবুল বলেন, ভাদ্রমাসে লতিফ তার দলবল নিয়ে কিছু জমির পাকা ধান জোরপূর্বক কেটে নেয়। বর্তমানেও জমিতে থাকা পাকা ধান কেটে নেয়ার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
বাবুল আরও বলেন, ২০২২ সালে আমাদের পারিবারিক কবরস্থানে উন্নয়ন কাজ করা হয়। এ কাজের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিল আমার ভাই আবুল আল মাহমুদ। কাজের শেষ পর্যায়ে আমাদের গ্রামের আমির আলী ও গেদুসহ ২৫/৩০ জন লোক সংঘবদ্ধভাবে মাহমুদের উপর হামলা চালায়। মারধরের একপর্যায়ে মাহমুদ ঘটনাস্থলেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান অনেক আগেই মারা গেছেন মাহমুদ। এঘটনায় মামলা দায়ের হলে মূল আসামী আমির আলী ও ইয়াকুবকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ।
তিনি বলেন, আবুল আল মাহমুদের মৃত্যু পরবর্তী সময়ে আমেনা খাতুন হেনা ও তার সৎভাই আলতাবুল ইসলামের ভুমিকা সন্দেহের জন্ম দিচ্ছে যে আবুল আল মাহমুদের হত্যার নেপথ্যে তাদের ইন্ধন রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মোখলেসুর রহমানের পরিবারের সম্পত্তি রক্ষা ও জানমালের নিরাপত্তায় প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন রুহুল কুদ্দুস বাবলু।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মোখলেসুর রহমানের ছেলে মাহবুব আলম রেজভীসহ লুৎফুর রহমান খসরু, খলিলুর রহমান, তায়েফ আহমদ।