রাজধানী থেকে বিয়ানীবাজার ফেরার পথে স্কুল শিক্ষক অপহৃত!

রাজধানী ঢাকার সায়দাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাড়ি ফেরার পথে ফরিদ উদ্দিন নামে বিয়ানীবাজারের এক স্কুল শিক্ষক অপহৃত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সায়দাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে সিলেটের বিয়ানীবাজার আসার পথে অজ্ঞাত অপহরণকারী তাকে অপহরণ করে।

এ ঘটনায় অপহৃত স্কুল শিক্ষকের স্ত্রী আফরোজা জেসমিন বুধবার (২২ নভেম্বর) নিখোঁজ স্বামীর সন্ধান চেয়ে বিয়ানীবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেছেন।

অপহৃত স্কুল শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন (৪০) বিয়ানীবাজার উপজেলার তিলপাড়া ইউনিয়নের তিলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছবর আলীর ছেলে এবং বেজগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কয়েছ উদ্দিনের ছোটভাই। তিনি উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের নালবহর উচ্চ বিদ্যালয়ে করণিক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

নিখোঁজ ফরিদ উদ্দিনের স্ত্রী ও তার স্বজনদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, কানাডা গমনের উদ্দেশ্যে বছর খানেক পূর্বে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার একজন অজ্ঞাত ব্যক্তির সাথে চুক্তি করে নগদ এক লাখ টাকাসহ পাসপোর্ট জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্বনাথের সেই ব্যক্তি নানা বাহানায় পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ফরিদ উদ্দিনকে ঘুরাচ্ছে। এরপর মাসখানেক পূর্বে অজ্ঞাত সেই মানবপাচারকারী ফরিদ উদ্দিনকে ঢাকায় নিয়ে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আরও সাত লাখ টাকা দিতে বলেন। কিন্তু ফরিদ উদ্দিন সেই টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সকালে পাসপোর্ট সংগ্রহ করার জন্য ফরিদ উদ্দিনকে পুনরায় ঢাকায় দেখা করার কথা বলেন এবং নির্ধারিত সেই স্থানে গিয়েও তার দেখা পাননি। পরে মঙ্গলবার রাতে ফরিদ উদ্দিন ‘নারায়ণগঞ্জ আছেন, ভোরবেলা বাড়ি ফিরবেন’ এবং ‘ফোনে চার্জ প্রায় শেষের দিকে, অফ হয়ে যাবে’ বলে স্ত্রী আফরোজা জেসমিনকে হোয়াটস্যাপ চ্যাটে জানান। কিন্তু এরপর ওইদিন রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ফরিদ উদ্দিনের সাথে তার পরিবার যোগাযোগ করতে পারছে না। তবে বুধবার বিকালে স্বামীর হোয়াটস্যাপ চ্যাটে নতুন ভাবে মেসেজ আসতে শুরু করে। সেসব মেসেজে ফরিদ উদ্দিনের একাউন্ট নম্বর জানতে চাওয়া হয়, নগদ টাকা পাঠানোর কথা বলা হয় এবং টাকা না পেলে ফরিদ উদ্দিনকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। এছাড়া পুলিশের কাছে বিষয়টি না জানাতে ফরিদ উদ্দিনের স্ত্রীকে নির্দেশ দেয়া এবং এতে নাকি ফরিদ উদ্দিনের ক্ষতি করা হবে জানিয়ে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়।

নিখোঁজ স্বামীর সন্ধান পেতে হোয়াটস্যাপে যোগাযোগ করা অজ্ঞাত সেই ব্যক্তির কাছে স্বামীকে দেখার কিংবা কথা বলতে দেয়ার অনুরোধ করেন ফরিদ উদ্দিনের স্ত্রী আফরোজা জেসমিন। কিন্তু তার এমন অনুরোধ নাকচ করে এর প্রতিত্তোরে হোয়াটস্যাপ চ্যাটে ‘ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছি, এখন কথা বলতে পারবে না’ বলে জানানো হয়। এরপর থেকে অজ্ঞাত কেউই ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে যোগাযোগই করেননি।

স্বামী ফরিদ উদ্দিনের জন্য দুশ্চিন্তায় অনেকটা ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন উৎকন্ঠায় থাকা তার স্ত্রী আফরোজা জেসমিন। ঠিকভাবে কথাও বলতে পারছেন না তিনি। তবুও তিনি বলেন, বিয়ানীবাজার থানায় গিয়ে আমার স্বামীকে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছি।

এ ব্যাপারে জানতে বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবদুলাল ধর জানান, ‘ঢাকা থেকে ফেরার পথে স্কুল শিক্ষক নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা তার স্ত্রীসহ স্বজনরা থানায় এসে আমাদেরকে বিষয়টি জানিয়েছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’