ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ পৌরসভার অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে এই সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। কয়েক বছর ধরেই এমন ভোগান্তিতে পৌরবাসী।
এদিকে দীর্ঘ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিকদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে পৌরসভায় গ্রাউন্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে এক বছর আগে। অথচ নানা জটিলতার কারণে এখনও প্ল্যান্ট চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে ৯ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মিত প্ল্যান্ট টি বেকার পড়ে আছে। ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, নাগরিকদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ২০১৭ সারাদেশে ৪০ পৌরসভা পানি সরবরাহ প্রকল্প হাতে নেয় জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ প্রকল্পের আওতায় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ পৌরসভায় গ্রাউন্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের উদ্যোগ নেয়া হয়। নবীগঞ্জ পৌরসভার কানাপুরে ২০১৮ সালে ২৪ মে গ্রাউন্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ শুরু হয়। এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে তিনটি পাম্প হাউজ ও ২৭ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানোর কাজ। যার মোট ব্যায় ধরা হয় ৯ কোটি ১ লাখ ৯৪ হাজার ২৪৬ টাকা। ২০২২ সালের জুনে কাজ শেষ হলে পৌরসভার কাছে প্ল্যান্ট হস্তান্তর করে নির্মাণকারি সংস্থা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এখানে মূলত তিনটি পাম্পের মাধ্যমে ভু-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের পর পরিশোধন করা হবে। এরপর সেখান থেকে পৌঁছে দেয়া হবে গ্রাহকের কাছে। অথচ গ্রাউন্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের এক বছর অতিবাহিত হলেও গ্রাহকের কাছে এখনও পানি পৌঁছাতে পারেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। ফলে পৌরবাসীর বিশুদ্ধ পানির যে সংকট ছিল, তা রয়েই গেছে। এরই মধ্যে পানি সরবরাহের জন্য পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে স্থাপন করা হয়েছে ১৫ কিলোমিটার পাইপলাইন।
অভিযোগ উঠেছে- ব্যবহার না হওয়ায় এবং অপরিকল্পিতভাবে স্থাপন করায় বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এসব পাইপলাইন।
নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর এটিএম সালাম বলেন, নবীগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা। ২০১৮ সালে প্ল্যান্টের কাজ শুরু হয়ে ২০২২ সালে শেষ হয়েছে। এরপর এক বছরের অধিক সময় চলে গেলেও গ্রাহকরা পানি পাননি।
তিনি বলেন, প্রায় এক বছর আগে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি জমা নেয়ার মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়াও শেষ করেছে পৌরসভা। অথচ এখন পর্যন্ত পানি দেয়ার নাম নেই।
নবীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছাবির আহমেদ চৌধুরী বলেন, প্ল্যান্টটি চালুর জন্য প্রস্তুত। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের যে নতুন নিয়ম করেছে সেই নিয়মের জটিলতার কারণে আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছি না। তিনি বলেন, ড্রেন নির্মাণ করতে গিয়ে পাইপলাইন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সেটা খুব বেশি না। মাত্র ৫০০/৭০০ মিটার পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ব্যাপারে ড্রেন নির্মাণকারি সংস্থা সড়ক ও জনপথ বিভাগকে চিঠি দিয়েছি। তারা যদি সাড়া না দেয় তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত পাইপলাইন নতুন করে বসানোর সক্ষমতা পৌরসভারও আছে।
নবীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমীতি উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘প্রথম অবস্থায় নবীগঞ্জ পৌরসভা ৩০কিলোওয়াট বিদ্যুতের জন্য আবেদন করে। তখন আমরা সংযোগ দেয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি। টান্সফরমার বসানোর কয়েকমাস পর তারা কিলোওয়াট বাড়ানোর জন্য আবেদন করে। তখন ৩০ কিলোওয়াটের পরিবর্তে ১৩২ কিলোওয়াটের আবেদন করে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ি ৫০ কিলোওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য গ্রহককে টান্সফরমারসহ যন্ত্রাংশ কিনতে হয়। এছাড়া স্থাপন করতে হয় একটি সাবস্টেশন। পৌর কর্তৃপক্ষ সঠিক সময়ে সেই উদ্যোগ না নেয়ায় বিদ্যুৎ সংযুগ দেয়া সম্ভব হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সংযোগ দেয়ার শেষ ধাপে রয়েছি আমরা। সিটি-পিটি পরিক্ষার জন্য ঢাকা পাঠানো হয়েছে। পরিক্ষার পর রিপোর্ট আমাদের কাছে আসলেই আমরা সংযোগ দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’