সংবিধান ও আইন অনুযায়ী ‘বাংলাদেশে মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা আছে’ বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) জেনেভায় জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর)-এর চতুর্থ পর্যালোচনা বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে এই বক্তব্য তুলে ধরেছেন তিনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে সরকার অনলাইন ও অফলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিয়েছে৷ বর্তমানে দেশে ৩৯টি টিভি চ্যানেল, ৫৭৬টি সংবাদপত্র ও ১৮২টা অনলাইন নিউজ পোর্টাল রয়েছে৷ ২৩২৮ টি স্থানীয় এনজিও ও ২৬৭টি বিদেশি এনজিও কোনো ধরনে বাধা বা সেন্সরশিপছাড়া কাজ করতে পারছে বলেও দাবি করেন তিনি৷
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, বাংলাদেশ সরকার সংবিধান অনুযায়ী জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে বদ্ধপরিকর৷ নির্বাচন কমিশন যাতে স্বাধীনভাবে, বিশ্বাসযোগ্যভাবে এবং দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারে এজন্য তাদের যথেষ্ট ক্ষমতা নিশ্চিত করা হয়েছে৷
বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিকে অসাংবিধানিক হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘‘এটি অসাংবিধানিক ও অবৈধ৷”
সংবিধানের বাধ্যবাধকতার প্রেক্ষিতে সরকার সব রাজনৈতিক দলকে দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ সমাবেশের, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের অনুমোদন দিচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘আমরা দেখছি বিএনপির কর্মীরা সহিংসতা ছড়াচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমকর্মী, নিরপরাধ মানুষ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্কুলকে সহিংস হামলার লক্ষ্য বানিয়েছে৷” কোন রকমের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না হয়ে নির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ আটক করছে বলেও জানান তিনি৷
বাংলাদেশের বিরোধী দলের উপর রাজনৈতিক দমন পীড়নের অভিযোগ থাকলেও বর্তমান সরকারের অধীনে বরং তারা বেশি সুযোগ পাচ্ছে বলে দাবি করেন আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দায়িত্ব নেয়ার পর বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক সুযোগের দিক থেকে উল্লেখযোগ্য গুণগত পরিবর্তন ঘটেছে৷ সংসদে বিরোধী দলগুলো সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ভোগ করছে৷ আগের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিপরীতে সংসদীয় কমিটিতে কয়েকটি সভাপতির পদ বিরোধীদের দেয়া হয়েছে৷ আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রেও বিরোধী সংসদ সদস্যদের মতামতকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হয়৷
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমরা যেকোনো মানবাধিকার বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করি৷”
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কোনো বেআইনী কর্মকাণ্ড করে থাকলে প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি৷ জানান , ২০১৫ সাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ১৬৯২টি ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে৷ ৮৪৮৮ জন পুলিশের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে৷ নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২৪ টি মামলা হয়েছে৷
মানবাধিকার পরিস্থিতির ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর)-এর চতুর্থ পর্যালোচনা বৈঠকে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। প্রতিনিধিদলে ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং জেনেভায় জাতিসংঘ কার্যালয়ে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ সুফিউর রহমানসহ অন্যরা।
সূত্র : ডয়েচে ভেলে