ভারতের ছোঁড়া টার্গেট ছিল মাত্র ২৩০ রানের। তখন থেকেই হয়ত বিশ্বকাপে নিজেদের ২য় জয়ের স্বপ্নটাই দেখছিল ইংল্যান্ড। অথচ মোহাম্মদ শামি, জাসপ্রিত বুমরাহ আর কুলদীপ যাদবের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রীতিমত ভেঙে পড়ে ইংলিশদের ব্যাটিং ইউনিট। বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা প্রায় ছিটকে গিয়েছে আজকের এই হারে। ভারতের বিপক্ষে ইংলিশদের পরাজয় ১০০ রানে। একইসাথে এখন পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ভারতের জয়রথ ছুটছেই।
২৩০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই ছিল। প্রথম ৪ ওভারেই রান এসেছিল ৭ এর উপর রানরেটে। ইংলিশদের ব্যাটিং সুখ টিকেছে ওই পর্যন্তই। পরপর দুই বলে দাভিদ মালান আর জো রুটকে ফেরান বুমরাহ। ইংলিশদের ধ্বংসযজ্ঞের সূচনা ওখান থেকেই। সাবধানী বেন স্টোকস আজ রানের খাতাই খুলতে পারেননি। ১০ বলে করেছেন শূন্য। জনি বেয়ারস্টোও খেলতে চেয়েছেন ধীরে। তিনিও আউট হয়েছেন ব্যক্তিগত ১৪ রানে। তাদের দুজনকেই ফিরিয়েছিলেন শামি। ৪০ রানের আগেই নেই ইংলিশদের ৪ উইকেট।
অধিনায়ক জশ বাটলার আবারও হতাশ করেছেন এদিন। ২৩ বলে করেছেন মোটে ১০ রান। কুলদীপের দুর্দান্ত বলে ভেঙেছে তার প্রতিরোধ। মঈন আলী আর লিয়াম লিভিংস্টোন প্রতিরোধ করতে চাইলেও কাজে আসেনি। দুজনে বল খেলেছেন বিস্তর। সময় কাটিয়েছেন। তবে রান আসেনি তেমন। দুজনের জুটি ২৯ রানের। এবার আউট হলেন মঈন। উইকেট পেয়েছেন সেই শামি। ইংলিশদের পরাজয় তখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
লিভিংস্টোন ছিলেন দলের সর্বোচ্চ স্কোরার। ৪৬ বলে করেছেন ২৭ রান। কুলদীপের বলে তার আউট শেষ করে দিয়েছিল সব আশাই। মাঝে ক্রিস ওকস ২০ বলে করেছেন ১০ রান। এরপর দুই চারে আদিল রশিদের ১৩ আর ডেভিড উইলির ১৬ ইংলিশদের ১০০ রানের গন্ডি ছাড়াতেই কেবল সাহায্য করেছিল। ইংলিশরা থামে ১২৯ রানে। হারের ব্যবধান ঠিক ঠিক ১০০ রান।
এর আগে রোববার বিশ্বকাপের একমাত্র ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে দেখা গেল অন্য এক ইংল্যান্ডকে। আগের ৫ ম্যাচের মাত্র একটি জয় নিয়ে এসেছিল ইংলিশরা। বিশ্বকাপে টিকে থাকার তাগিদে এই ম্যাচেই জয় নিশ্চিত করতেই হতো তাদের। সেই তাড়না থেকেই কিনা পিচে আগুন ঝরালেন ডেভিড উইলি-আদিল রাশিদরা। সেই বোলিংয়ের উত্তাপে নাস্তানাবুদ হয়েছে ভারত। ম্যান ইন ব্লুরা স্কোরবোর্ডে তুলেছিল ২২৯ রান।
ভারতের ব্যাটিং লাইনআপে এদিন বড় স্কোর করতে পেরেছেন কেবল রোহিত শর্মাই। ডাক মেরেছেন বিরাট কোহলি। পুরো ইনিংসে চারজন নিজেদের স্কোর নিয়ে গিয়েছে ডাবল ডিজিটে। বাকি সবার নামের পাশেই টেলিফোন নম্বর।
শুরুটা এদিন মোটেই ভাল হয়নি ভারতের। বিশ্বকাপে বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হয়েছেন ভারতের তরুণ ব্যাটিং সেনসেশন শুভমান গিল। ইংলিশদের বিরুদ্ধেও দেখা গেল একই চিত্র। ১৩ বলে ৯ রান করে ওকসের বলে বোল্ড হন র্যাঙ্কিংয়ে দুইয়ে থাকা এই ব্যাটার। দলের স্কোর তখন ২৬।
ক্রিজে বিরাট কোহলি। তাকে ঘিরে স্বপ্নটাও বিরাট। কিন্তু কোহলি যেন শুরু থেকেই ছিলেন অস্বস্তিতে। ৯ বল টিকলেন কোনক্রমে। রানের খাতা খোলার আগেই ফিরলেন তিনি। উইলির বলে স্টোকসের হাতে কাজ দেন তিনি। সংগ্রাম করেছেন শ্রেয়াশ আইয়ারও। ১৬ বলে ৪ রান করে প্যাভিলিয়নে যান এই ব্যাটার।
রোহিতের সঙ্গ তখন লোকেশ রাহুল। দুজন মিলে শুরু করেন ইনিংস মেরামতের কাজ। এই দুজনের জুটিই সামাল দেয় প্রাথমিক ধাক্কা। চতুর্থ উইকেটে যোগ করেন ৯০ রান। এরপরেই আবার এগিয়ে এসে খেলতে চাইলেন রাহুল। টপ এজড হয়ে হলেন আউট। সূর্যকুমারের সুযোগ ছিল নিজেকে প্রমাণের। ইনিংসের শুরু থেকে সেই চেষ্টাই করেছেন। তবে এদফায় ফিরেছেন রোহিত। আদিল রশিদকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লিভিংস্টোনের দারুণ ক্যাচে আউট হন তিনি। করেছেন দলীয় সর্বোচ্চ ৮৭ রান।
সূর্যকুমার তখনো রানের স্রোতেই ছিলেন। এরমাঝে ৮ রানের ইনিংস খেলেছেন রবীন্দ্র জাদেজা। ১ রান করে ফিরে গিয়েছেন শামিও। সূর্য নিজেকে দূর্ভাগা ভাবতেই পারেন। ফিফটির মাত্র ১ রান আগেই থেমেছে তার ইনিংস। ৪৯ রানে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মারকুটে এই ব্যাটার। শেষদিকে বুমরাহর ১৬ আর কুলদীপের ৯ রান ভারতের ইনিংস টেনে নিয়েছে ২২৯ পর্যন্ত। লক্ষ্ণৌর পিচে সেটাই ভারতের জয়ের জন্য ছিল যথেষ্ট।
এই জয়ের পর ৬ ম্যাচে ৬ জয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরেই আছে ভারত। সেমিফাইনাল বলতে গেলে নিশ্চিতই করে ফেলেছে তারা। অন্যদিকে ৫ম হারের পর ২ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতেই থাকছে ইংলিশরা।