কবি জীবনানন্দ দাশের ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। পৃথিবীর নিষ্ঠুর মায়া ত্যাগের পূর্বাভাস যেন তারই কবিতায়। কবি বলেছেন, ‘মনে হয় একদিন আকাশে শুকতারা দেখিব না আর; দেখিব না হেলেঞ্চার ঝোপ থেকে এক ঝাড় জোনাকি কখন নিভে যায়।’ কবির এ আশঙ্কা সত্যে পরিণত হয় ১৯৫৪ সালে। ১৪ অক্টোবর তিনি ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হন। তাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। এরই মধ্যে তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। অবশেষে ২২ অক্টোবর রাতে জীবনানন্দের জীবনাবসান ঘটে।
বিশ শতকের অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক জীবনানন্দ দাশ বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃৎদের অন্যতম। তার কবিতায় পরাবাস্তবের দেখা মেলে। তার প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী। মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিশ শতকের শেষ ভাগে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন। জীবনানন্দ দাশের আজীবন স্মৃতিবিজড়িত অতিপ্রিয় ‘ধানসিঁড়ি নদী’। ধানসিঁড়িকে কেন্দ্র করেই তিনি লিখেছেন ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি। কবি জীবনানন্দ দাশ ধানসিঁড়ির তীরে হয়তো আর আসবেন না; কিন্তু তার স্মৃতি আজও ধানসিঁড়ির আকাশে-বাতাসে মিশে আছে।
১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলা শহরে জীবনানন্দ দাশ জন্মগ্রহণ করেন। ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে? কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে’ কবিতার কবি কুসুমকুমারী দাশের সন্তান জীবনানন্দ দাশ। বাবা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ জীবনানন্দের কাব্যে হয়ে উঠেছে চিত্ররূপময়, তাতে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি’ অভিধায় খ্যাত হয়েছেন। বুদ্ধদেব বসু তাকে ‘নির্জনতম কবি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে, অন্নদাশঙ্কর রায় তাকে ‘শুদ্ধতম কবি’ অভিধায় আখ্যায়িত করেছেন। সমালোচকদের অনেকে তাকে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল-পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি বলে মনে করেন। প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশের বেখেয়ালি জীবন কেটেছে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে। তিনি ছেলেবেলা থেকেই মায়ের প্রভাবে কবিতা লিখতে শুরু করেন। ১৯১৯ সালে ‘বর্ষা আহ্বান’ কবিতাটি ব্রহ্মবাদী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তখন তিনি জীবনানন্দ দাশগুপ্ত নামে লিখতেন। ১৯২৭ সাল থেকে জীবনানন্দ দাশ নামে লিখতে শুরু করেন। ঝরা পালক, রূপসী বাংলা, ধূসর পাণ্ডুলিপি, মহাপৃথিবী, বনলতা সেন, সাতটি তারার তিমির জীবনানন্দের উল্লেখযোগ্য কাব্যসমগ্র।
মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ধাপে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন। তিনি প্রধানত কবি হলেও তার বেশকিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধও প্রকাশ পেয়েছে। ১৯৫৪ সালে অকালমৃত্যুর আগে তিনি নিভৃতে ১৪টি উপন্যাস এবং ১০৮টি ছোটগল্প লিখেছেন। জীবনানন্দের বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থ নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্র সাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত হয় ১৯৫৩ সালে। ১৯৫৫ সালে শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থটি ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করে।
সিলেট ভয়েস/এএইচএম