অর্থ চাই না, সমর্থন ও সহমর্মিতা চাই : ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত

ইসরাইলি আগ্রাসনে সৃষ্ট মানবিক সংকটের এই মুহূর্তে টাকা নয়, পূর্ণ সমর্থন চায় ফিলিস্তিন। সহমর্মিতা নিয়ে বিশ্ব ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াবে এটাই চায় ফিলিস্তিন।

বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকার ফিলিস্তিন দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত ইউসেফ রামাদান সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

এর আগে ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানিয়ে ইরান, ইরাক, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, কাতারসহ বাংলাদেশে অবস্থিত ওআইসির সদস্যভুক্ত দেশের রাষ্ট্রদূতরা ফিলিস্তিন দূতাবাসে আসেন। তবে সৌদি রাষ্ট্রদূত সেখানে আসেন নি।

ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে ফিলিস্তিনকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে। গত তিন বছরে ১০ লাখ ডলার সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশের জনগণ। তবে এই মুহূর্তে ফিলিস্তিনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অনুধাবন করা জরুরি। এটি অর্থনৈতিক সহায়তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা বাংলাদেশের জনগণের কাছ থেকে অর্থ নয়, চাই সহমর্মিতা।’

আরও পড়ুন : মর্গে পরিণত হতে পারে গাজার সব হাসপাতাল, আশঙ্কা রেডক্রসের

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ফিলিস্তিন এখন শুধু ইসরায়েল নয়, পশ্চিমা আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে। সেখানকার মানুষজন এক মানবতাহীন জীবন যাপন করছে। বিদ্যুৎ, পানি, খাবার, চিকিৎসা কোনো কিছুই সেখানে আর পর্যাপ্ত নেই। পুরো ফিলিস্তিন জুড়ে মানবতার সংকট চলছে। ফিলিস্তিনের গাজা এখন এক মৃত্যুপুরীতে রূপান্তরিত হয়েছে। মরদেহ রাখারও জায়গা হচ্ছে না মর্গগুলোতে।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এরই মধ্যে দুই লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ি ছেড়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোকে আহ্বান করব, তারা যেন ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ায়। এখনই ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ করতে হবে। ইসরায়েলিরা সেখানে নারী, শিশু, যুবক কিংবা বৃদ্ধ কোনো কিছুই আর বিবেচনা করছে না। তারা শুধু ফিলিস্তিনের নাগরিক পেলেই হত্যা করছে। ফিলিস্তিনিরা এখন মানবতার সর্বনিকৃষ্ট অবস্থায় রয়েছে। উল্টো ইসরায়েলিরা নারী ধর্ষণ, শিশু হত্যাসহ নানা বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে শিশু হত্যা কিংবা ধর্ষণের যে অভিযোগ আনা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ বিষয়ে কোনো তথ্য বা ছবি কি দিতে পেরেছে? কোনো প্রমাণ কি দেওয়া হয়েছে? অথচ ইসরায়েল অন্যায়ভাবে ফিলিস্তিনি নারীদের হত্যা করেছে, শিশুদের হত্যা করেছে।’

সব বিভেদ ভুলে সারা বিশ্বের ফিলিস্তিনিরা এক হয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সব বিভেদ ভুলে দেশের মানুষ এবার চূড়ান্ত রকমের ঐক্যবদ্ধ। সারা বিশ্বের ফিলিস্তিনিরা এবার ঐক্যবদ্ধ। হামাস-ফাত্তাহ যা-ই বলেন না কেন সবাই এখন একত্র হয়েছে। সবার লক্ষ্য এখন একটাই। সেটি হলো স্বাধীনতা এবং মুক্তি। তাই এখন সব সময়ের চেয়ে বাংলাদেশের জনগণকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’

ফিলিস্তিনিদের পাশে বাংলাদেশ ছিল এবং আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা সব সময় ফিলিস্তিনের নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের যুবকদের এমন সমর্থন আমাদের অনুপ্রাণিত করে। আমরা আশা করি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার সব সময় আমাদের পাশে থাকবে।’

উপস্থিত রাষ্ট্রদূতদের উদ্দেশে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি ধন্যবাদ জানাই আমার ভাইদের, যারা আমাদের বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন। আজকে আমাদের বিপদে পাশে দাঁড়ানোর জন্য ওআইসির সদস্যভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা এখানে এসেছেন। তারা ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।’