লিবিয়ায় বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসন বলছে, শুধু ডেরনা অঞ্চলেই ৫ হাজার ৩০০ মরদেহ গণনা করা হয়েছে। শহরের জমা পানি, কাদার স্রোত, সমুদ্রের পানি, ধসে যাওয়া বাড়ির ছাদে ও জানালায়– সর্বত্র মৃতদেহের ছড়াছড়ি। ডেরনা শহরকে আপাতত মৃত্যু উপত্যকা ছাড়া অন্য কিছু ভাবা যাচ্ছে না। শহরটির এক-চতুর্থাংশ নিশ্চহ্ন হয়ে গেছে।
রেড ক্রিসেন্টসহ দাতব্য সংস্থাগুলো বলে আসছিল, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় ১০ হাজার মানুষ নিখোঁজ নয়তো মারা গেছেন। তবে আজ বুধবার স্থানীয় চিকিৎসক ও দাতব্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা ২০ হাজার হতে পারে।
নিহতের সংখ্যা আরও অনেক বাড়তে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
আরও পড়ুন : লিবিয়ায় বন্যায় ৬ বাংলাদেশির মৃত্যু
পূর্বাঞ্চলীয় লিবিয়ার প্রশাসনের বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী হিচেম চকিউয়াত বলেন, ডেরনার সমুদ্র প্রতিনিয়ত কয়েক ডজন লাশ ফেলে দিচ্ছে। এ নগরীতে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। এমনকি দ্বিগুণও হতে পারে। তিনি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চেয়ে বলেছেন, এই মাত্রার দুর্যোগ মোকাবিলার অভিজ্ঞতা লিবিয়ার নেই। লিবিয়ার আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বলছে, ডেরনায় ৩০ হাজার লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
ডেরনা শহরে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষের বসবাস। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে রয়টার্সের সাংবাদিকরা জানান, চারপাশে শুধুই ধ্বংসস্তূপ। অনেক ভবন পানিতে ভেসে গেছে। রাস্তার ওপর কিছু গাড়ি উল্টে রয়েছে। হাসপাতালের করিডোরে অনেক মৃতদেহ রাখা হয়েছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে রাখা মরদেহগুলোর মধ্যে নিজেদের প্রিয়জনকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণকারী প্রশাসনের বেসামরিক বিমান চলাচলমন্ত্রী হিশেম আবু কিওয়াত বলেছেন, সাগর, উপত্যকা, ভবনের নিচে, সব জায়গায় মৃতদেহ পড়ে আছে। আমি যদি বলি যে শহরের ২৫ ভাগ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, তবে বাড়িয়ে বলা হবে না। অনেক ভবন ভেঙে পড়েছে।
ঘূর্ণিঝড় দানিয়েলের তাণ্ডবে প্রলয়ংকরী বন্যায় লন্ডভন্ড হয়ে যায় ল-বায়দা, আল-মার্জ, তোবরুক, বাতাহ, বেনগাজির মতো শহর। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হয় ডেরনার।
প্রবল বৃষ্টি এবং হড়পা বানে প্রথমে একটি বাঁধ ভাঙে ডেরনা নদীর। তারপর এর পানির তোড়ে সশব্দে ভেঙে যায় আরও দুটি নদীর বাঁধ। বাঁধে জমা পানি এর পরই সুনামির মতো বয়ে যায় শহরের ওপর দিয়ে। ভাসিয়ে নিয়ে যায় শহরের বাড়িঘর। বন্যার পানিতে খেলনার মতো ভাসতে দেখা যায় বাস, ট্রাক, গাড়িকে।
প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ে আহতের সংখ্যাও কম নয়। ডেরনার সরকারি হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসার জায়গা হচ্ছে না। হাসপাতালের বাইরে কাতারে কাতারে পড়ে রয়েছে আহত মানুষ। তাদের সংখ্যা হাজারের কাছাকাছি। মৃতদেহ চিহ্নিত করার জন্যও হাসপাতালে ভিড় করছেন প্রিয়জনরা। সব মিলিয়ে বেহাল দশা ডেরনা শহরের।
সূত্র : বিবিসি ও রয়টার্স