সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস আলী, সরকারের দেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বসতঘর বীর নিবাস নির্মাণের জন্য নিজের বসত ঘর ভেঙে দিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। দুই বছরে কাজ শেষ না হওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ ও হতাশ।
শুধু ইলিয়াস আলী নন উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত বীর নিবাসের প্রথম পর্যায়ের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন অন্তত ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা।
ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে জগন্নাথপুর উপজেলায় ২০২১ সালে ১২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য একটি করে পাকা ঘর তৈরি করে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। এরপর দরপত্রের ঠিকাদারদের মাধ্যমে বীর নিবাস নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় অনেকেই আধাকাচা পুরোনো বসতঘর ভেঙে দিয়ে অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিয়ে বীর নিবাস নির্মাণের জায়গা করে দেন।
২০২২ সালের জুন মাসে ১২ টি ঘরের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনো কোন ঘরের কাজ শেষ হয়নি। এতে করে তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের ইসমাইল চক গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মনা মিয়া বলেন, জীবনের শেষ বেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের দেওয়া পাকাঘরের জন্য বসতভিটা খালি করে ভাঙা ঘরে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছি। গত অক্টোবর মাস থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, ঝড়ো হাওয়ায় ভাঙা ঘরের টিন পড়ে নাতি শাহরিয়ার আহত হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে কোন প্রতিকার মেলেনি।
জগন্নাথপুর উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২১ সালে জগন্নাথপুর উপজেলায় ১২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে ১২টি পাকা ঘর বীর নিবাসের কাজ শুরু হয়। ঘর প্রতি ১২ লাখ টাকা বরাদ্দে জগন্নাথপুরের ঠিকাদার আবু লেইস ঘরের দরপত্রের নিয়ম অনুযায়ী কাজ পান। কিছু কাজ করার পর চলমান বিল না পেয়ে ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে দেন।
বীর নিবাসে বরাদ্দপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধারা হলেন— উপজেলার হরিনাকান্দি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা রবীন্দ্র কুমার দাস, মেঘারকান্দি গ্রামের বনমালী দাস, হিলালপুর গ্রামের ধীরেন্দ্র কুমার দাস, কামড়াখাই গ্রামের আমিনা বেগম রৌয়াইল গ্রামের তৈমুন চৌধুরী, ইসমাইল চক গ্রামের মনা মিয়া, নলুয়া নলুয়া নোওয়াগাঁও গ্রামের নরেন্দ্র দাস, তেঘরিয়া গ্রামের রোকেয়া খাতুন, জগন্নাথপুর গ্রামের জলিকা বিবি, শ্রীরামসি গ্রামের ইলিয়াস আলী, বড় শেওড়া গ্রামের শৈলেন নমসুদ্র, খাগাউড়া গ্রামের বারফুল বিবি।
জগন্নাথপুর উপজেলা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার আবদুল কাইয়ুম বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা বীর নিবাসের ঘর বরাদ্দ পেয়েও দুর্ভোগে আছেন। এ বিষয়ে আমরা বারবার সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে কোন সুফল পাচ্ছি না।
ঠিকাদার আবু লেইছ বলেন, বীর নিবাসের কাজ যথাসময়ে শুরু করেছিলাম। কাজের অগ্রগতি অনুযায়ী চলমান কাঙ্ক্ষিত বিল না পাওয়ায় কাজ কিছু দিন বন্ধ ছিল। এখন আবার কাজ শুরু করেছি। শীঘ্রই সব ঘরের কাজ শেষ হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন ভূঁঞা বলেন, জগন্নাথপুরের ১২ বীর নিবাসের কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে তাগদা দেওয়া হয়েছে। বন্ধ থাকা কাজ আবার শুরু হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ে কাজ শেষ হবে।