সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার ১নং বাংলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য জটিলতায় স্থবির হয়ে পড়েছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। পাশাপাশি নাগরিক সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন জনসাধারণ। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা চলতি বছরে ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স না পেয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। এ জটিলতায় বাংলাবাজারের অনেক ব্যবসায়ী এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৫ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় উপজেলার ১নং বাংলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদটি শূন্য ঘোষণা করা হলে এবং উচ্চ আদালতে মামলা জটিলতার কারণে ওই ইউনিয়নের নাগরিকসেবা কার্যত অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নাগরিকত্ব সনদ, জন্মনিবন্ধন, উত্তরাধিকার সনদ, ট্রেডলাইসেন্সসহ নাগরিক সুবিধা পেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন এখানকার মানুষ। চলমান নাগরিক ভোগান্তি সামাধানে কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ স্থানীয় সরকার নীতিমালা অনুযায়ী চেয়ারম্যান পদটি শূন্য কিংবা মামলা জটিলতা থাকলে ইউপি সদস্যদের থেকে নির্বাচিত প্যানেল চেয়ারম্যান পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন, কিন্তু কার্যকর হচ্ছে না ওই নীতিমালাও।
ইউপি সদস্যরা বলেছেন, গত ৫জুন চেয়ারম্যানের নানা অনিয়ম দুর্নীতি সুস্পষ্ট প্রমাণিত হওয়ায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বাংলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদটি শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকে। ইউপি চেয়ারম্যান পদটি শূন্য হওয়ার পর থেকে প্যানেল চেয়ারম্যান পদটি সচল না হওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
বাংলাবাজারের ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, গত জুন থেকে নতুন ট্রেড লাইসেন্স না পাওয়ায় তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স না থাকায় ব্যবসায়িক অন্যান্য লাইসেন্সের রেনু করা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে পথে বসতে হবে।
বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি রওশন আলী বলেন, ‘আমরা ট্রেড লাইসেন্সের জন্য বিপাকে আছি। চেয়ারম্যান পদটি শূন্য ঘোষণার পর মামলা জটিলতায় আমাদের কেউ ট্রেড লাইসেন্স দিচ্ছেন না। এ নিয়ে বারবার ইউএনও মহোদয়ের কাছে গিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।’
ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান, বশির আহমেদ, আবুল হাসনাত, সামছুল ইসলামসহ অনেকে বলেছেন, প্রতি বছর ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে ট্রেড লাইসেন্স পেয়ে থাকি। চেয়ারম্যান পদ শূন্য জটিলতায় এখন কেউ আমাদের ট্রেড লাইসেন্স দিতে পারছেন না। বিশেষ করে টিআইএন, ভিন সার্টিফিকেট, ঋণ কার্যক্রম এবং বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে ডিলারদের চুক্তি কার্যক্রম স্থগিত হয়ে রয়েছে। এতে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
তাঁরা বলেন, এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। ব্যবসা নিয়ে আমাদের এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
ইউপি সদস্য (প্যানেল চেয়ারম্যান) মো. আবু হানিফ বলেন, ‘আমি তো দিতে চাই। কিন্তু ইউপি সচিব ট্রেড লাইসেন্স দিতে অনাগ্রহী। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’
ইউপি সচিব সুজন তালুকদার, ‘গত ৫জুন চেয়ারম্যান পদটি শূন্য ঘোষণার পর এবং পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে মামলা জটিলতার কারণে ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া যাচ্ছে না। এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনাও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে দিচ্ছেন না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফ মুর্শেদ মিশু বলেছেন, ‘ট্রেড লাইসেন্স কেউ দিতে না চাইলে ব্যবসায়ীরা লিখিত অভিযোগ দিলে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।’