ছোট-বড় ১৩৭টি হাওর নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জকে বলা হয় হাওরের রাজধানী। জেলার প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাছ ধরা ও কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান।
কিন্তু কৃষি জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের কারণে এই অঞ্চলের মাছ ও জীববৈচিত্র্য আজ হুমকিস্বরূপ। বন্যাকবলিত ও দুর্গম এলাকা হওয়ায় এখানকার শিক্ষার হারও অনেক কম। যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম নৌকা হওয়ায় এখানে স্কুলগামী শিশু মৃত্যের হার অন্যান্য এলাকা থেকে অনেক বেশী। বন্যার সময় এই মৃত্যু হার আরো বেড়ে যায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দূরে হওয়ায় শিক্ষার্থীরাও তেমন আগ্রহ দেখায় না।
তাছাড়া বন্যা এই অঞ্চলের একটি অন্যতম সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তন এই সমস্যাগুলোকে আরো তীব্র করে তুলেছে এখানকার জীবনমান। আর রামসার সাইট হওয়ার ফলে এই এলাকার জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষিত হওয়ার চেয়ে বেশী হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যুব জনগোষ্ঠী।
এ নিয়ে শনিবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে যুব জনগোষ্ঠীর দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে সুনামগঞ্জে তাহিরপুরে অনুষ্ঠিত হলো ইয়ুথ কপ রিজিওনাল কনসালটেশন বিষয়ক কর্মশালা।
বিভিন্ন গ্রাম থেকে আগত তরুণরা হাওরের পরিবেশের নানা সমস্যা তুলে ধরেন এই কর্মশালায়। একই সাথে তারা হাওরের সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পরামর্শ দেন।
তরুণরা জানান জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হাওর এলাকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বছর বছর অকাল বন্যায় ফসলহানি হচ্ছে। এতে মানুষের জীবন-জীবিকা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে। বন্যায় মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে অনেক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
তাছাড়া প্রান্তিক জেলা হিসেবে এখানে পেশা নির্বাচনের সুযোগ সীমিত। একটা বড় জনসংখ্যা মৎস্যজীবি যা জলবায়ু বেশীরভাগ নারীর আয়বর্ধন মূলক কাজের সুযোগ হলো হাঁস মুরগি পালন ও মৎস্য কাজ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগের ফলে যা নিয়মিত বাধাপ্রাপ্ত হয়।
পরিবেশ বান্ধব ট্যুরিজম নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে তরুণরা বলেন, হাওড় এলাকার নদী ও বিলগুলো বিজ্ঞান সম্মতভাবে খনন ও হাওর এলাকায় বেশি করে হিজল করচসহ স্থানীয় জাতের গাছ রোপণ করতে হবে। পাশাপাশি হাওড় রক্ষা বাঁধে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করা ও নীতিমালা অনুযায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তারা।
হাওরে দেশীয় মাছের আকাল উল্লেখ করে তরুণরা কোনা ও কারেন্ট জালসহ সকল অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করা এবং প্রজননকালীন সময়ে মাছ ধরা বন্ধ রেখে হবে এই সময়ে জেলেদের প্রণোদনা দেয়ার আহ্বান জানান তারা।
তরুণরা আরো জানান, সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রচুর পরিমাণে ওপার থেকে বালু আসার কারণে মানুষের ঘরবাড়ি তলিয়ে যাচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দায়িত্ব নিতে হবে। তরুণরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে জলবায়ু সুবিচারের দাবি জানিয়েছে কর্মশালায়।
কর্মশালা সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন অ্যাকশন এইড ইয়ুথ মোবিলাইজেশন কো-অর্ডিনেটর আরিফ সিদ্দিকী ও ইয়ুথ লিডার মাহবুল আলম তামিম।
পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজার সভাপতিত্বে কর্মশালার সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন তাহিরপুরের সহকারি কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামান রনি। এসময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, শিক্ষক ও সুশীল সমাজের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।