বিয়ানীবাজারে রথযাত্রা উৎসব শেষে মাসব্যাপী মেলার আয়োজন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
গত ২৮ জুন রথযাত্রা সম্পন্ন হলেও চিরায়ত ঐতিহ্যের বাইরে গিয়ে গত মঙ্গলবার (১১ জুলাই) সুপাতলাস্থল বাসুদেব মন্দির প্রাঙ্গনে বাণিজ্যিক মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মন্দিরের নাম করে কিছু সুবিধাভোগীরা এ মেলার আয়োজন করছে। ঐতিহ্যের রথযাত্রার মেলার সাথে এ মেলার কোন সম্পর্ক নেই। একই সাথে মেলার কারণে মন্দিরের লাগোয়া দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদানও ব্যাহত হচ্ছে।
মাসব্যাপী মেলার আয়োজন বন্ধ করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছেন সুপাতলা এলাকার আরজু দাস, অরণ্য মোহন কর, তপন জ্যোতি পাল, জামাল উদ্দিন ও জাকির খান।
আবেদনে তারা অভিযোগ করেন বাসুদেব সেবক সংঘকে এক লাখ টাকা দিয়ে একটি বিশেষ মহল বাসুদেব মন্দিরের সামনে বাণিজ্যিক মেলার আয়োজন করছে। এতে এলাকার অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাবে এবং একই সাথে মেলার কাছাকাছি থাকা সুপাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সুপাতলা নিদনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যাহত হবে। এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি ও শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে পাঠদান অব্যাহত রাখার স্বার্থে দ্রুত সময়ের মধ্যে মেলার আয়োজন বন্ধ করতে দায়িত্বশীলদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বাসুদেব সেবক সংঘ মাসব্যাপী মেলার আয়োজনের প্রস্তুতি নিলেও জেলা প্রশাসক দুই সপ্তাহের জন্য মেলার অনুমোদন দিয়েছেন। মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ মাসব্যাপী মেলার আয়োজনের সকল প্রস্তুতি নিয়ে দোকান বরাদ্ধ দিয়েছে। একই সাথে জেলা প্রশাসকের কাছে পুনরায় মেলার মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেছেন।
অভিযোগকারি আরজু দাস বলেন, এটা বাসুদেব সেবক সঙ্গের মেলা নয়। এ মেলা থেকে প্রাপ্ত অর্থও বাসুদেব সেবক সংঘ পাওয়ার সুযোগ নেই। এ মেলাটি একটি বিশেষ মহল প্রভাব খাটিয়ে করছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানালেও কাজ হয়নি। সেজন্য নিরুপায় হয়ে প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের সরনাপন্ন হয়েছি।
অপর অভিযোগকারি অরণ্য মোহন কর বলেন, বাসুদেব প্রাঙ্গনে গ্রামীণ উপকরণ দিয়ে পুরো আষাঢ় মাস জুড়ে মেলা হতো। অথচ দুইদিন পরই আষাঢ় মাস শেষ হবে। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক তাদের দুই সপ্তাহের সময় দিয়েছেন। প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে যাতে মেলার সময় আর বৃদ্ধি করা না হয়।
তপন জ্যোতি পাল বলেন, এটা কোনভাবে বাসুদেব রথযাত্রা উৎসবের মেলা মেলা নয়। এটি বাণিজ্যিক মেলা, সেখানে সনাতন ধর্মালম্বিদের সাথে অনেক মুসলমান ব্যবসায়ী জড়িত রয়েছেন।
বাসুদেব সেবক সংঘের সাধারণ সম্পাদক ও মেলার আয়োজক সদস্য অরুণাভ পাল মোহন বলেন, রথযাত্রা উৎসব শেষে সপ্তম শতাব্দির বাসুদেব মন্দির প্রাঙ্গনে মেলার আয়োজন করা হয়। করোনার কারণে গত তিন বছর মেলা হয়নি। এবার প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে আমরা আয়োজন করেছি। এ বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। এটি বাসুদেব সেবক সংঘের আয়োজিত বাসুদেব রথযাত্রা উৎসব মেলা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফসানা তাসলিম বলেন, মেলার আয়োজন ও বন্ধের জন্য দুইটি আবেদন করা হলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনগুলো পাঠিয়েছি। তিনি বলেন, বাসুদবে প্রাঙ্গনে শত বছর থেকে ঐতিহ্যবাহী মেলা বসে। এরই ধারাবাহিকতায় জেলা প্রশাসন থেকে দুই সপ্তাহের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।