কানাইঘাটে সড়ক যেন ‘মরণফাঁদ’, উন্নয়নে অনিয়মের দায় কার?

কানাইঘাট উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো দীর্ঘদিন থেকে যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সরকারের উন্নয়ন হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে টেকসই হচ্ছে না সেই উন্নয়ন। এসব বিষয় সামনে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে স্থানীয়দের সরব প্রতিবাদ। প্রতিবাদ করছেন ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাকর্মী পর্যন্ত।

বিগত প্রায় ৫ বছরে সরকারের বিভিন্ন দফতর ও স্থানীয় সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদারের মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে একক ব্যক্তির আধিপত্য ও প্রকল্পের কাজে হরিলুট এবং রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশার চিত্র তুলে ধরে ফেসবুকে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সচেতন মহল থেকে শুরু আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

বিশেষ করে জনগুরুত্বপূর্ণ কানাইঘাট-চতুল-দরবস্ত সড়ক এবং পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো ভেঙেচুরে বিশাল বিশাল গর্ত হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে জানান আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী।

তারা বলেছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার এলাকাবিমুখ হওয়ায় বিগত প্রায় ৫ বছরে এমপির বরাদ্দকৃত কোটি কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড দলের নেতাকর্মীদের পাশ কাটিয়ে করার কারণে কর্মীরা পর্যন্ত জানেন না কোথায় হচ্ছে এমপির উন্নয়ন কাজ। এসব উন্নয়ন মূলক কর্মকাণ্ডের কমিশন বাণিজ্য ও ভাগ-বাটোয়ারা, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে মাঠ পর্যায়ে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান হচ্ছে না বলেও অভিযোগ তাদের।

জানা গেছে, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটে ‘ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন সহায়তা’ খাতের আওতায় স্থানীয় সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদারের মাধ্যমে গাছবাড়ী বোরহান উদ্দিন রাস্তার বিভিন্ন স্থানে ভাঙনকৃত অংশে বেডসফিলিং বাবদ ১০ লক্ষ টাকা, গাছবাড়ী নয়াগ্রাম মাসুকের বাড়ি হতে পূর্বমূখী রাস্তা উন্নয়নে ৫ লক্ষ টাকা এবং নিজ রাজাগঞ্জ গ্রামের আরসিসি রাস্তার পাশে শফিক উদ্দিনের বাড়ি থেকে পূর্বমূখী রাস্তার ড্রেন নির্মাণে ৩ লক্ষ টাকা, উপজেলার অসহায় ও দুস্থ জনসাধারণের মধ্যে ডেউটিন সরবরাহ ১০ লক্ষ টাকা, মুলাগুল কান্দলা নয়াবাজারের বিভিন্ন অংশে পানি নিষ্পাশনের জন্য রিংপাইপ স্থাপন ৪ লক্ষ টাকা, তালবাড়ী লক্ষীপুর গ্রামের আব্দুল ওয়াহাবের দোকানের সম্মুখ হতে নতুন মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা উন্নয়নে ৩ লক্ষ টাকা, ভবানীগঞ্জ গ্রাম জামে মসজিদ রাস্তার দক্ষিণ অংশের উন্নয়ন ৩ লক্ষ টাকা এবং কুওরঘড়ি শ্রী শ্রী বিষহরি মাতার মন্দির গীতা স্কুলের উন্নয়ন ২ লক্ষ টাকাসহ মোট ৪০ লক্ষ টাকার রক্ষণাবেক্ষনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব বরাদ্দের মধ্যে সম্প্রতি গাছবাড়ী বোরহান উদ্দিন সড়কের ভাঙ্গা অংশে নিম্নমানের ভাঙা ইট ও বালু ফেলে কাজ করা হলেও অধ্যবধি বরাদ্দকৃত অন্যান্য প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। এসব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করার জন্য উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তরকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাজ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে টাকা তসরুফ করা হচ্ছে বলে ফেসবুকে ভাইরাল করা হচ্ছে।

এ নিয়ে উপজলো প্রকৌশলী আবু হানিফার সাথে কথা বললে তিনি কোন কার্যাদেশ দেখাতে পারেননি। অনেক প্রকল্পের কাজ এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে, তিনি বলেন চলতি মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে।

এদিকে গত কয়েক দিন থেকে রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশার চিত্র এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের অনিয়ম-দুর্নীতি তথ্য তুলে ধরে সাথে এমপি হাফিজ মজুমদার, এমপির কাজ দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মস্তাক আহমদ পলাশ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র লুৎফুর রহমানের ছবি জুড়ে দিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ ঝাড়ছেন জনসাধারণ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে করে আসছে নেতিবাচক নানা মন্তব্য।

এ ব্যাপারে সিলেট-৫ আসনের সাংসদ হাফিজ আহমদ মজুমদারের সাথে মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাথে কথা বলা যায়নি।

কানাইঘাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন ও স্থানীয় সংসদ সদস্য হাফিজ মজুমদারের বরাদ্দকৃত অর্থের কাজ যাতে সঠিকমতো হয় তিনি সব-সময় এ নিয়ে সমন্বয় কমিটিতে কথা বলে থাকেন। তারপরও উন্নয়নমূলক কাজে অনিয়ম দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ যেহেতু উঠেছে তা সঠিকভাবে তদন্ত করে দেখার জন্য বলেন।