১৪ বছর পর সাফের সেমিফাইনালে যেতে উঠেছিলো বাংলাদেশ। হাতছানি ছিলো ১৮ বছর পর ফাইনাল খেলার। তবে অতিরিক্ত সময়ের গোলে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে লাল সবুজদের।
র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকার পরেও দর্শনীয় ফুটবলে সবার মন জয় করতে পেরেছিল। কুয়েতের বিপক্ষে প্রথম সেমিতে জিততে পারলে ১৮ বছর পর ফাইনালে খেলার স্বাদ পেতে পারতো। দুই অর্ধে দারুণ ফুটবলে শক্তিশালী কুয়েতকে আটকে রেখেছিল জামাল ভুঁইয়ার দল। কিন্তু ১০৭ মিনিটে গোলে লাল-সবুজদের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে কুয়েত। সেমিতে ১-০ গোলে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে পৌঁছেছে মধ্য এশিয়ার দলটি।
র্যাঙ্কিংয়ে কুয়েতের অবস্থান ১৪১তম। বাংলাদেশের ১৯২। তার পরেও কুয়েতের সঙ্গে সমানে সমান লড়েছে বাংলাদেশ। এখন তো দ্বিতীয় মিনিটে মোরসালিনের মিস হওয়া সুবর্ণ সুযোগটিই বাংলাদেশকে পোড়াচ্ছে।
বেঙ্গালুরুতে ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে গোল করে এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের। বিশ্বনাথের লম্বা থ্রো-ইন থেকে ডান প্রান্ত দিয়ে রাকিবের নিচু ক্রস বক্সে পেয়েছিলেন মোরসালিন। কিন্তু প্রথম দফায় ফাঁকায় গোলকিপারের গায়ে মেরে প্রথম সুযোগটি নষ্ট করেছেন তিনি। ফিরতি বল দ্বিতীয় দফায় কাছে পেলেও তা ঠিকমতো আয়ত্তে নিতে পারেননি। এর পরেও জমজমাট ম্যাচ উপহার দিয়েছে তারা।
কুয়েত তাদের প্রথম সুযোগটি পায় ৭ মিনিটে। কর্নার থেকে মুহাইসিনের হেড ডিফেন্ডার ইসা ফয়সাল প্রায় গোললাইন থেকে প্রতিহত করে বাংলাদেশ দলকে ম্যাচে রেখেছেন। তার পর চাপ বাড়াতে থাকে কুয়েত। বাংলাদেশকে বক্সের মধ্যে ঢুকতেই দিচ্ছিল না। তাই গোলকিপারকে অপ্রস্তুত করার কৌশল নেন রাকিব। ২৮ মিনিটে বক্সের বেশ বাইরে থেকে জোরালো শট নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গোলকিপার জায়গা থেকে একটু সরে এসে সেটি তালুবন্দি করেছেন।
দ্বিতীয়ার্ধেও গোল পায়নি কেউ। বিরতির পর শুরুতে কুয়েত ফ্রি-কিক ও কর্নার থেকে গোল করার চেষ্টা করে। সফল হয়নি যদিও। ৫৪ মিনিটে বরং চমক দেখানোর চেষ্টা করেছেন রাকিব। কিন্তু তার নেওয়া বাঁ পায়ের বুলেট গতির শট অল্পের জন্য ক্রসবারের ওপর দিয়ে গেছে।
৬১ মিনিটে আবারও ত্রাস ছড়ান রাকিব। মোরসালিনের রক্ষণ চেরা পাসে আগের ম্যাচের মতো বাইলাইনের কাছাকাছি গিয়ে জোরালো শট নিয়েছিলেন। কিন্তু এই উইঙ্গারের শট ক্রস বারে লেগে প্রতিহত হলে আবারও হতাশ হতে হয় তাদের । ৬৩ মিনিটে কুয়েতের একটি ফ্রি-কিক প্রতিহত করেন জিকো। একটু পর কুয়েত আবারও গোলের চেষ্টা করে। কিন্তু আল রশিদির শট সেভ করেন বাংলাদেশ গোলকিপার।
নির্ধারিত সময়ের পর খেলা গড়ায় যোগ হওয়া সময়ে। তাতে প্রথম সুযোগেই গোল করার কাছে পৌঁছে গিয়েছিল কুয়েত। যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে বক্সে ঢুকে জোরালো শট নিয়েছিলেন আব্দুল্লাহ। কিন্তু সেটি ক্রসবারের একটু ওপর দিয়ে গেছে। তার পরেও দমে যায়নি তারা।
দুই অর্ধে বাংলাদেশকে ম্যাচে রাখার কৃতিত্ব গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকোর। অতিরিক্ত সময়েও বীরত্ব দেখান তিনি। ৯৯ মিনিটে কুয়েত গোলের সুযোগ তৈরি করলেও দুই দফা আল রশিদির শট অতিমানবীয়ভাবে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তবে ১০৭ মিনিটে শেষ রক্ষা করতে পারেননি তিনি। আল বাউসি বক্সে ঢুকে নিঁখুত শটে গোল করে কুয়েতকে এগিয়ে দিয়েছেন। অবশ্য এই গোলের সময় সামনে তপু বর্মণ থাকায় বিভ্রান্ত হয়েছিলেন জিকো। বলটি তপুর দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে আল বাউসি জালে পাঠিয়েছেন। জিকো মনে করেছিলেন তপু হয়তো বলটি ক্লিয়ার করবেন।
শেষ দিকে বাংলাদেশ সমতা ফেরাতে মরিয়া চেষ্টা চালাতে থাকে। কিন্তু সফল হয়নি একবারও। ১১৩ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে সমতা ফেরাতে রহমত জোরালো শট নিয়েছিলেন। কুয়েত গোলকিপার সহজেই তালুবন্দি করেছেন তা। ১১৭ মিনিটে বিশ্বনাথের লং বলে রাকিবের শট গোলকিপার পা বাড়িয়ে প্রতিহত করেছেন। শেষ সময়ে সুমন রেজা-বিশ্বনাথরা চেষ্টা করেও ম্যাচে সমতা ফেরাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত হতাশ হলেও নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশ গর্ব নিয়েই মাঠ ছেড়েছে। দেশের ফুটবল যখন নাকি এক সংকটের মুহূর্ত পার করছে। তখন জামাল ভূঁইয়াদের লড়াকু এই মানসিকতা স্বস্তির উপলক্ষ এনে দিচ্ছে।