সারাদেশে মুষলধারে বৃষ্টি। অথচ সিলেটে বৃষ্টি নেই। এমন শুষ্ক আবহাওয়ায় সকাল থেকে সিলেটে ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের এই আনন্দ নগর থেকে গ্রাম পর্যন্ত। সকালে ঈদ জামাতের মাধ্যমে শুরু হয় ঈদের আনুষ্ঠানিকতা।
সকাল ৮টার আগে থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে ঐতিহাসিক শাহী ঈদগাহ ময়দান। শাহী ঈদগাহ ময়দানে সকাল ৮টায় সিলেটের ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন বন্দরবাজার জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা কামাল উদ্দিন। সিলেটের বৃহত্তর এই ঈদ জামাতে অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
নামাজ শেষে অনুষ্ঠিত হয় ঈদের নামাজের খুতবা। খুতবা শেষে মোনাজাত করেন মাওলানা কামাল উদ্দিন। সেখানে তিনি বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করেন।
এদিকে, শাহী ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
এসময় তারা, সিলেটের শান্তি, সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। সিলেটের উন্নয়নে দল মত নির্বিশেষে এক যোগে কাজ করার আহ্বান জানান তারা।
এদিকে সিলেট জেলা ও মহানগরে এবার ৩০২৩টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয় ২৫৮৬টি ও মহানগরে ৪৩৭টি ঈদ জামাত।
এর মধ্যে দরগাহে হযরত শাহজালাল (রহ.) জামে মসজিদে পবিত্র ঈদুল আযহার জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মুফতি মাওলানা আসজাদ হোসাইন।
সিলেট কালেক্টরেট জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৮টায়। নামাজের আগে বয়ান পেশ করেন এবং নামাজে ইমামতি করেন মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা শাহ আলম।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও নগরীর বন্দরবাজারস্থ কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদে ঈদুল আযহার পৃথক ৩টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৭টায়, ইমামতি করেন শায়েখ সাঈদ বিন নুরুজ্জামান আল মাদানী। দ্বিতীয় জামাত হয় সকাল ৮টায়, ইমামতি করেন হাফেজ মাওলানা মিফতাহুদ্দীন এবং তৃতীয় জামাত ৯টায় অনুষ্ঠিত হয়, ইমামতি করেন হাফেজ মাওলানা হোসাইন আহমদ।
ঈদুল আজহার প্রধান আনুষ্ঠানিকতা কুরবানি। নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন কুরবানি দেয়ার কাজে। এসময় আল্লাহর রাহে কুরবানি আদায় করেন। তাদের প্রত্যাশা ছিল, কুরবানির মাধ্যমে ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল হবে এই দেশ, এই জাতি।
২৪ ঘন্টার মধ্যেই কোরবানীর পশুর হাট ও কোরবানীর পশু জবাইয়ের বর্জ্য অপসারণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। এজন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নগর পরিচ্ছন্নতায় ১০টি টিম সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে।
অপরদিকে এবারও ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নগর পরিচ্ছন্ন করতে ৩ স্থরে সিসিকের ৩২০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী মাঠে নেমেছে। ৪২ ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতায় কাজ করছে সিসিকের ১০টি টিম। এছাড়া সুষ্ঠুভাবে বর্জ্য অপসারণ কাজ সম্পন্ন করতে সিসিকের বিশেষ মনিটরিং টিমও মাঠে রয়েছে। বর্জ্য অপসারণের পরপর জীবাণুমুক্তকরণে নগরজুড়ে জীবাণুনাশকও ঔষধও ছিটানো ও স্প্রে করা হবে।
নগর পরিচ্ছন্নতার কাজে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মতিউর রহমান খান, সিসিকের সম্পত্তি কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দেব, নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আলম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শামসুল হক, সহকারী প্রকৌশলী মো. জসিম উদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী রজি উদ্দিন খান, নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করবেন।
নগরবাসির প্রতি অনুরোধ জানিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিবারের মত নগরবাসির সহযোগীতায় কোরবানি পরবর্তী দ্রুততম সময়ে আমরা সিলেট নগরকে পরিচ্ছন্ন করে তুলবো। কোরবানির পশু জবাইয়ের বর্জ্য কোনভাবেই বাসাবাড়ির আশপাশের কোন ড্রেন, ছড়া কিংবা নদীতে ফেলবেন না।’
তিনি যত্রতত্র পশু জবাইয়ের বর্জ্য না ফেলে নির্ধারিত স্থানে বা বাসার সামনে সংরক্ষণ করে সিসিকের পরিচ্ছন্ন শাখায় যোগাযোগ করার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।