আরাফার ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামিয়ায় হাজিদের উদ্দেশে দেওয়া হজের খুতবায় মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন শায়খ ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সাঈদ।
বলেন, আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধভাবে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাদের মাঝে দ্বন্দ ও দল উপদল তৈরি করতে নিষেধ করেছেন।
এ সময় তিনি বলেন, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি একত্রে বসবাস করার মাঝে শান্তি রেখেছেন এবং পরস্পরের মাঝে দ্বন্দ ও বিচ্ছেদের বিষয়টিকে অপছন্দ করেছেন। এবং আমরা আল্লাহকে ভয় করি, তিনি করুণাময় ও দয়ালু। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ সা. তার রসূল বান্দা, যিনি সহাবস্থান ও সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছেন এবং অন্যের সঙ্গে শত্রুতা করতে নিষেধ করেছেন।
খুতবায় তিনি আরও বলেন, আল্লাহ তাঁর রাসূলের মাধ্যমে মানুষের অন্তরকে একত্রিত করেছেন এবং মানুষের অবস্থা সংশোধন করেছেন। আল্লাহ তায়ালা তার ঘরে জিয়ারত ও মানুষকে জাকাত প্রাদানের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তার রাসুল (সা.)-কে পাঠিয়েছেন এবং মানবতার সংস্কার করেছেন, তিনি আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ঐক্যের মধ্যেই দ্বীন ও দুনিয়ার কল্যাণ রয়েছে, মুসলমানদের একে অপরের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, কোনো বিষয়ে মতপার্থক্য দেখা দিলে কোরআন-সুন্নাহ থেকে সমাধান খুঁজে নিতে হবে।
শায়খ ইউসুফ খুতবায় আরও বলেছেন, একজন আরবের কোন বিদেশীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব নেই, একজন শ্বেতাঙ্গের কোন কালোর উপর শ্রেষ্ঠত্ব নেই, হজরত মুহাম্মদ বলেছেন, কারো উপর কারো শ্রেষ্ঠত্ব থাকলে তা কেবল তাকওয়ার ভিত্তিতে, সদাচরণের ভিত্তিতে।
মুসলমানরা, তাকওয়া অবলম্বন কর, আল্লাহকে ভয় কর এবং সংস্কারের চেষ্টা কর, শিরক করো না এবং পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার কর, আল্লাহ পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের অধিকার সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, তোমাদের সব আমল কিয়ামতের দিন আল্লাহ সামনে উপস্থাপন করা হবে। মুসলমান তোমরা অপকে পাপ কাজে সহযোগিতা করো না, সৎকাজে সহযোগিতা করো, শয়তান মানুষের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি করে, সব মুসলমান এক দেহের মতো।
হজের সমাবেশে থেকে পুরো বিশ্বের মুসলিমদের তিনি ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান।
আজ মঙ্গলবার থেকে সৌদি আরবের মক্কা নগরীর ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানে শুরু হয়েছে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। বিশ্বের নানা প্রান্তের লাখ লাখ মুসলমান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে হাজির হয়েছেন মক্কায়।‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হচ্ছে পবিত্র আরাফাতের ময়দান।
মঙ্গলবার আরাফাত দিবসে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ নামিরা থেকে হজের খুতবা ও নামাজ আদায়ের মধ্যদিয়ে পালিত হয় হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। আরাফাতে এ দিনের আনুষ্ঠানিকতাকে মূল হজ বলা হয়।
সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইতিহাসে এবারই (২০২৩ সালে) সবচেয়ে বেশি হাজির পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে কাবা প্রাঙ্গণ। কাবা ঘর প্রদক্ষিণ করেছেন বিশ্বের ১৬০টি দেশ থেকে আসা লাখ লাখ হাজি।
ইতিহাসের সবচেড়ে বড় হজ হওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এ বছর, আমরা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হজ প্রত্যক্ষ করছি।’
আল আরাবিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। হাজিরা ফজরের নামাজের পর মিনার উদ্দেশে যাত্রার মধ্য দিয়ে হজের কার্যক্রম শুরু করেন। আর শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে আগামী ১২ জিলহজ এই আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ভালোভাবে বিশ্রামে থাকা নিশ্চিত করতে মিনা এলাকায় হাজার হাজার তাঁবু স্থাপন করেছে। এখানে অবস্থানকালে হজযাত্রীরা সারারাত কোরআন তেলাওয়াত ও নামাজ আদায় করছেন।