কবরস্থান, বসতি বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি ও অসহায়দের জন্য নির্মিত সরকারি গুচ্ছগ্রামকে হুমকিতে ফেলে একটি প্রভাবশালী মহল অবাধে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পিয়াইন নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা ।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) দুপুর ১টায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়ন ও তেলিখাল ইউনিয়নের মধ্যেবর্তী পিয়াইন নদীর থেকে লামলীগাওঁ ও কাঁঠালবাড়ী গুচ্ছগ্রাম (শিমুলতলা আশ্রয়ন প্রকল্প) এর কবরস্থান, বসতি বাড়ি-ঘর, ফসলি জমিকে হুমকিতে ফেলে অন্তত ১০টি স্থানে লিস্টার মেশিন দিয়ে অবাধে বালু তোলা হচ্ছে। এতে নদের তীরে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বালু উত্তোলনের কারণে বিভিন্ন স্থানে ধসের সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে কাঁঠালবাড়ী গুচ্ছগ্রামের বেড়িবাঁধ বিভিন্ন স্থানে ধসে পড়ছে।
শুধু তাই নয়, স্থানীয়দের অভিযোগ মধ্যে রাত থেকে ভোর সকাল পর্যন্ত নদের তীর থেকে লিস্টার ড্রেজার মেশিন দিয়ে । শতাধিক নৌকা ভর্তি করে বালু উত্তোলন করে দিনের আলো ফোটার আগে নিয়ে যায়। এ বালু গুলো কয়েক কিলোমিটার দূরে পাশবর্তী সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রয়ের পর ফের সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে। বালু উত্তোলনে বাঁধা দিলে বালুখেকো মহল স্থানীয়দের বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুচ্ছগ্রাম ও লামলিগাওঁ নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, আমাদের বারবার বাঁধা ও অনুরোধ করা সত্ত্বেও বালুখেকো প্রভাবশালী মহল বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছেন। দিনরাতে বালু উত্তোলনের কারণে নদী পাড় ভেঙে আমাদের বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়ছে।
তারা আরও বলেন, প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ করে প্রতিকার মেলেনি। মাঝে মাঝে প্রশাসন থেকে অভিযানে আসে কিন্তু অভিযানে আসার খবর আগে থেকে পেয়ে তাঁরা মেশিন ও নৌকা নিয়ে পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাঁরা ফের বালু উত্তোলন মহোৎসব করে। তাদের দাবী প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ম্যানেজ করে বালু খেকোরা এসব কাজ করছে। এ অবস্থা বিরাজ করলে আগামী দু’তিন মাসের মধ্যে নদের পাশের ফসলি জমি, বাড়িঘর ও কবরস্থান ধসে নদগর্ভে বিলীন হবে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান উপজেলার একটি প্রভাবশালী মহল আড়ালে থেকে নদীতে লামলিগাওঁ গ্রামের আমিরের ছেলে ফখর উদ্দিন, জলিল মিয়ার ছেলে মমিন মিয়া ও বতাই শাহ সহ চমক আলীর নেতৃত্বে বালুবাহী নৌকা থেকে চাঁদা তোলা হয়।
গুচ্ছগ্রামের রহমত আলী জানান, সকাল থেকে শেষ রাত পর্যন্ত তাঁরা লিস্টার মেশিন বালু উত্তোলন করে। আমরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বাঁধা দিলে বালুখেকোরা আমাদের উপর হামলা করে। এই ভয়ে আমরা আমাদের ফসলি জমি রক্ষা করতে পারছি না।
গুচ্ছগ্রমের আনোয়ার মিয়া বলেন, পিয়াইন নদীর তীরবর্তী আমার বোরো ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে নিয়ে গেছে এই বালুখেকোরা। জমি বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করেও না পেয়ে দি’তিন ধরে সারাদিন জমির তীরে বসে থাকি।
স্থানীয় সমাজসেবক আব্দুর রউফ জানান, পাহাড়িঢলে নদীতে পানি আসার পর থেকে প্রভাবশালী একটি বালুখেকো মহল ইজারা কৃত জায়গা থেকে বালু উত্তোলন না করে অসহায়দের জন্য নির্মিত গুচ্ছগ্রাম ও লালমিগাওঁ এলাকার নদী থেকে শতাধিক লিস্টার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে অস্তিত্ব হুমকিতে ফেলছে। উপজেলা প্রশাসনের কাছে আমরা অভিযোগ করেছি আশা করি প্রশাসন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করবে।
এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জের সহকারী কমিশন (ভূমি) ডি.এম সাদিক আল শাফিন লিজ বহির্ভূতভাবে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে বলেন, পিয়াইন নদীর যে অংশটি লিজ দেওয়া হয়েছে তাঁর বাহিরে গিয়ে কিছু অসাধু বালু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পেয়ে দুই দিন আগে অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলনের লিস্টার মেশিন নষ্ট করেছি। আজ মঙ্গলবারও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম কিন্তু কোন নৌকা ও মেশিন পাওয়া যায় নি। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন আমরা অভিযানে যাওয়ার আগেও তাঁরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ উপজেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে।