আবর্জনায় নাকাল সিসিক, বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা

সিলেট নগরীর অন্যতম প্রধান সমস্যা যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা। পরিচ্ছন্ন সিলেট গড়ার লক্ষ্যে সিসিকের একাধিক উদ্যোগ নেয়ার পরেও সমস্যা আগের মতই রয়ে গেছে।

প্রতিদিন মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত নগরীর বেশ কয়েকটি বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রের পাশাপাশি রাস্তার পাশে জড়ো হতে থাকে ময়লার স্তুপ। আর বিকাল হলে ট্রাকে করে এসব ময়লা নেয়া হয় দক্ষিণ সুরমার লাল মাটিয়া এলাকায়। নগরীর বাসা বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মিলে প্রতিদিন অন্তত ২ শত ৭০ মেট্রিকটন ময়লা জড়ো করে ফেলা হয় খোলা আকাশের নিচে। দীর্ঘদিন থেকে খোলা আকাশের নিচে রাখা এসব ময়লা দূষিত করে তুলছে আশপাশের পরিবেশ। এবার এসব বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে হাঁটছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন এখনই এসব বর্জ্য থেকে বিকল্প কিছু উৎপাদনের চিন্তা করতে না পারলে দেখা দিবে বিপদ।

এ বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, লালমাটিয়া এলাকায় খোলা আকাশের নিচে ফেলা এসব ময়লার দুষিত পদার্থ মাটির সাথে মিশে আশপাশের টিবওয়েলের পানিতে মিশছে। এতে ওই এলাকার টিউবওয়েলের পানিতে শক্ত ধাতব পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যা মানব দেহের জন্য ক্যান্সারের কারণ।

এসব ময়লা-আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরামর্শ দিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, জাপানে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। সিলেটের এসব বর্জ্য থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য অনেকগুলো কোম্পানি প্রস্তাব দিয়েছে। এটি করতে পারলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জায়গা কম লাগবে এবং পরিবেশ রক্ষা হবে।

অপরদিকে এসব ময়লা-আবর্জনা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছেও এখন দুশ্চিন্তার অন্যতম কারণ। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আলম বলেন, প্রতিদিন অন্তত ২ শত ৭০ মেট্রিকটন ময়লা-আবর্জনা বের হয়। সবগুলো দীর্ঘদিন থেকে ফেলা হচ্ছে লালমাটিয়া এলাকায়। ওখানে এখন স্তুপে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া নগরীর এখন আরও বর্ধিত হয়েছে। পূর্বের ২৬.৫০ বর্গ কিলোমিটার নগরী এখন ৭৯.৫০ বর্গ কিলোমিটার হয়েছে। এতে বর্জের পরিমাণও দ্বিগুণ হবে। কিন্তু এসব বর্জ্য রাখার জন্য বিকল্প কোন জায়গা নেই। তাই আমরাও চাই বিকল্প কিছু হোক।

প্রকৌশলী রুহুল আলম বলেন, বেশ কিছু কোম্পানি এসব ময়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার প্রস্তাব দিয়েছে। এসব প্রস্তাবনা আমরা পর্যালোচনা করে চারটি কোম্পানির প্রস্তাবনা গত জানুয়ারি মাসে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছি। তবে এখনো কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। তিনি আরও বলেন, এসব কোম্পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য তারা জায়গা চেয়েছে। আমরা জায়গা দিতেও প্রস্তুত। এখন অপেক্ষা কেবল মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের।

নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আলম বলেন, বর্তমানে নগরী থেকে যে পরিমাণ বর্জ্য জড়ো করা হচ্ছে এ থেকে সর্বনিম্ন ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব বলে জানিয়েছে প্রস্তাবনাকারী কোম্পানিগুলো।