চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে ট্রেবল জয়ের কীর্তি গড়লো সিটি

চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে কীভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে হয়, সেটাই তো জানা ছিল না সিটির কোনো খেলোয়াড়েরই। এটাই যে সিটি ইতিহাসে প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি! অবশেষে অধরা চ্যাম্পিয়নস লিগ ধরা দিলো ম্যানসিটির হাতের মুঠোয়। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় সফল হলো তারা।

চলতি মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপের পর জিতলো চ্যাম্পিয়নস লিগ। তাতে ১৯৯৯ সালে ম্যানইউর পর প্রথম ইংলিশ ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জয়ের কীর্তি গড়লো তারা। শনিবার ইস্তানবুলে আতাতুর্ক অলিম্পিক স্টেডিয়ামে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইনালে ইন্টার মিলানকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন সিটিজেনরা।

ম্যাচে প্রেসিং ফুটবল খেলে ম্যানসিটির বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল ইন্টার। শুধু ফিনিশিংয়ের ঘাটতির কারণেই হৃদয় ভাঙলো তাদের। আর সুযোগ বুঝে রদ্রির করা দারুণ এক গোল ম্যানসিটিকে এনে দিলো বহুল আকাঙ্ক্ষিত শিরোপা।

প্রথম সুযোগ পেয়েছিল ম্যানসিটি। ষষ্ঠ মিনিটে বার্নার্ডো সিলভার শট বাঁ পোস্ট দিয়ে মাঠের বাইরে যায়। পরের ২০ মিনিট ইন্টারের মুহুর্মুহু আক্রমণে ছন্দে থাকতে পারেনি ম্যানসিটি। সিটিজেনদের আক্রমণভাগ ছিল একেবারে নিষ্প্রভ।

মাঝে ইন্টারের অধিনায়ক ব্রোজোভিচ গোলের সুযোগ নষ্ট করেন বল ক্রসবারের ওপর দিয়ে মেরে। ২৬ মিনিটে সিটিজেন গোলকিপার এডারসনের ভুলে বল পান বারেল্লা। তবে তার শট গোলবারের পাশ দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

পরের মিনিটেই ম্যানসিটি পরিষ্কার সুযোগ তৈরি করে।কেভিন ডি ব্রুইনার পাস থেকে আর্লিং হাল্যান্ডের বাঁ পায়ের শট কোনোমতে শরীর দিয়ে আটকান ইন্টার কিপার আন্দ্রে ওনানা।

গোলের দেখা না পেয়ে হতাশ ম্যানসিটি বড় ধাক্কা খায় বিরতির আগে। ৩০তম মিনিটে পায়ে চোট পান এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতায় ২৮টি গোল বানানো ডি ব্রুইনা। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে কিছুক্ষণ খেললেও পাঁচ মিনিট পর স্বেচ্ছায় মাঠ ছাড়েন। তার বদলে নামেন ফিল ফডেন। ২০২১ সালে চেলসির বিপক্ষে ফাইনালেও ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়েন বেলজিয়ান মিডফিল্ডার। ম্যাচটি ১-০ গোলে হেরে যায় ম্যানসিটি। এবার আর সেই আক্ষেপের পুনরাবৃত্তি হলো না।

ইনজুরি টাইমের প্রথম মিনিটে আকানজির বাঁ পায়ের শট গোলবারের ওপর দিয়ে গেলে গোল ছাড়াই প্রথমার্ধ শেষ করে ম্যানসিটি।

বিরতির পর ইন্টার পায় প্রথম সুযোগ। ৫৯ মিনিটে আকেনজি ব্যাকপাস দেন এডারসনকে। বল আগেভাগে দখলে নেন লাউতারো মার্তিনেজ। ম্যানসিটি গোলকিপারকে একা পেয়ে ডানপায়ের শট নেন। এডারসন দারুণ সেভে আর্জেন্টাইনকে হতাশ করেন। পরের মিনিটে ম্যানসিটির সুযোগ নষ্ট হয় দিয়াসের শট গোলবারের ওপর দিয়ে গেলে।

আচমকা গোলে ৬৮ মিনিটে লিড নেয় ম্যানসিটি। আকেনজির বাড়ানো বল ডানপ্রান্তে পেয়ে সিলভা এগিয়ে যান গোলমুখে। তার শটে বল ডারমিয়ানের গায়ে লেগে বক্সের মধ্যেই ছিল। রদ্রি দৌড়ে এসে জোরালো শটে ইন্টারের দুই ডিফেন্ডারের পাশ দিয়ে জাল কাঁপান।

দুই মিনিট পর ইন্টার অবিশ্বাস্যভাবে গোল করতে ব্যর্থ হয়। ডুমফ্রাইসের হেড করে বল বিপদজনক জায়গায় পাঠান। ডিমারকো হেড করেন লক্ষ্যে, কিন্তু বল ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। আবারও ডিমারকো ফিরতি হেড করেন, কিন্তু সামনে থাকা সতীর্থ রোমেলু লুকাকোর পায়ে লাগে বল।

তিন মিনিট পর লুকাকু ওই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তার ডানপায়ের নিচু শট দৃঢ়তার সঙ্গে ঠেকান এডারসন। ৭৮ মিনিটে ম্যানসিটি ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারতো। কিন্তু ফডেনের বাঁ পায়ের দুর্বল শট সহজে সেভ করেন ওনানা।

ম্যাচ বাঁচিয়ে নায়ক হতে পারতেন লুকাকু। ৮৮ মিনিটে ছয় গজ দূর থেকে নেওয়া তার নিচু হেড এডারসনের হাঁটুতে লেগে হতাশ করে ইন্টারকে। ফিরে আসা বল বিপদমুক্ত করেন দিয়াজ। ঘাবড়ে গিয়েছিল পুরো ম্যানসিটি। মিনিটখানেক পর গোলপোস্টের পাশ দিয়ে বল মারেন বেলজিয়ান স্ট্রাইকার। ইনজুরি টাইমে গসেনসকে রুখে দিয়ে আবারও বীরত্ব দেখান এডারসন। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজতেই আনন্দে মাতোয়ারা সিটিজেনরা, আর বিষাদের সুরে অশ্রুসিক্ত ইন্টার খেলোয়াড়রা। কেঁদেছে ম্যানসিটির খেলোয়াড়রাও, তবে সেটা ছিল আনন্দ অশ্রু।

ম্যানসিটির সঙ্গে ইতিহাস গড়েছেন কোচ পেপ গার্দিওলাও। প্রথম কোচ হিসেবে দুটি ক্লাবে ট্রেবল জিতলেন তিনি। বার্সার সঙ্গে ২০০৯ সালে এই কীর্তি গড়েন স্প্যানিশ কোচ। এটি তার তৃতীয় ১২ বছর পর প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি।

সিলেট ভয়েস/এএইচএম