বহুল প্রত্যাশিত দিরাই-শাল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আর এই আঞ্চলিক মহাসড়ক উদ্বোধনের মাধ্যমে যেন স্বপ্নের দুয়ার খুলছে অবহেলিত হাওরপাড়ের জনপদ দিরাই-শাল্লাবাসীর।
একই সাথে সুনামগঞ্জ সদর-দিরাই উপজেলা ভায়া শাল্লা-আজমিরীগঞ্জ হয়ে রাজধানী ঢাকার সাথে স্থাপিত হলো নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ।
রোববার (২৮ মে) বেলা ২টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সুরঞ্জিত পত্নী ড. জয়া সেন গুপ্তা এমপি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়ের পরিচালনায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, সড়ক ও জনপথ সিলেটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ফজলে রব্বে, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত, নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম, টিকদারি সংস্থার কর্ণধার লুৎফুর রহমান ও ওহিদুজ্জামান বাবুল, দিরাই পৌরমেয়র বিশ্বজিৎ রায়, সিরাজউদদৌলা, কাজল বরন দাস প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন, শাল্লা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আল মুক্তাদির, দিরাইর ইউএনও মাহমুদুর রহমান মামুন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এড. রিপা সিনহা, ওসি কাজী মোক্তাদির হোসেন, ওসি আমিনুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট অভিরাম তালুকদারসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. জয়া সেনগুপ্ত এমপি বলেন, দিরাই-শাল্লাবাসীর ভালবাসার মানুষ প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্বপ্নের বাস্তবায়নের আজ শুভ সূচনার দিন। বহুল কাঙ্ক্ষিত দিরাই-শাল্লার আঞ্চলিক মহাসড়কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে সুনামগঞ্জ সদর দিরাই উপজেলা ভায়া শাল্লা-আজমিরীগঞ্জ হয়ে রাজধানী ঢাকার সাথে নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, এই সড়কের মাধ্যমে উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য, মৎস্য সম্পদ ইত্যাদি পরিবহন সহজতর হবে। জনসাধারণের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে ও পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে।
তিনি আরও বলেন, ‘এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবিটি পূরণ করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’
এছাড়া দ্রুততম সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়ে এই কাজটি যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয় এজন্য এলাকাবাসী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা চান ড. জয়া সেনগুপ্ত।
এদিকে, স্বাধীনতার ৫২ বছর পর দিরাই-শাল্লা সংযোগ সড়ক স্থাপিত হওয়ার খবরে হাওর অধ্যুষিত দুই উপজেলাবাসীর সাধারণ জনগণের মধ্যে বইছে আনন্দের জোয়ার।
সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দুই উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে উপমহাদেশের প্রখ্যাত পার্লামেন্টারিয়ান, জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রচেষ্টায় ২০০৯ সালে দিরাই হতে শাল্লা পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ নামে একটি প্রকল্প গ্রহন করা হয়। কিন্তু প্রকল্প এলাকা হাওড় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় বিভিন্ন বাস্তবমুখী কারণে ২০১৭ সালে প্রকল্পটি অসমাপ্ত অবস্থায় সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। পরবতীতে প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পত্নী দিরাই-শাল্লার সাংসদ ড. জয়া সেনগুপ্ত সড়কটি নির্মাণে একাধিক বার জাতীয় সংসদে দাবি উত্থাপন করেন। অবশেষে তাঁর দৃঢ় প্রচেষ্টায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্বপ্নের এই সড়ক নির্মাণ কাজ নতুনভাবে একনেকে অনুমোদিত হয়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জন্মভূমির নির্মাতা- ওহিদুজ্জামান চৌধুরী- দি নির্মিত জয়েন্ট ভেনচার (jon jv) কাজটি নির্মাণ করছে। ৪টি প্যাকেজে প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয়েছে ৬২৮ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা। ২২.৭৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রকল্পে ৯টি ব্রিজ ও ১২টি কালভার্টসহ সমুদয় কাজ দ্রুততম সময়ে করা হবে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিচালক ওহিদ্দুজ্জামান চৌধুরী।