সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচন তথা মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী।
শুক্রবার সিলেটে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পৃষ্টপোষক ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের কাছে তিনি এ দাবি জানান।
সিলেট নগরীর একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আমি সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সহ সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছি। ২০১৮ সালে সিলেট-১ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে সংসদ নির্বাচন করেছি। বিগত দিনে সিলেটের মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থেকেছি। আর সেই তাগিদে আমি এবার সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যে এক বছর আগে থেকেই সিলেটে কার্যক্রম শুরু করি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়- টাকার কাছে ফিকে হয়ে পড়েছে একজন রাজনীতিকের স্বপ্ন। এবার সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে। প্রায় কোটি টাকার বিনিময়ে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে জাতীয় পার্টির টিকিট।’
মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি দলের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করি। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় জানানো হয় ৬ মে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার নেয়া হবে। কিন্তু হঠাৎ একদিন দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মাধ্যমে জানতে পারি ৪ মে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন বোর্ডের সভা হবে। বিষয়টি জানার পর আমি দলীয় দপ্তরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। পরে বার বার দলের চেয়ারম্যানের মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।’
তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত কয়েকজন নেতাকর্মী আমাকে জানান- দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় নজরুল ইসলাম বাবুলকে সিলেট সিটি নির্বাচনে দলের মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনিত করা হয়েছে। এ বিষয়টি জানার পর আমি ও আমার সাথে থাকা সিলেটের নেতাকর্মীরা চরম হতাশ হই।’
জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, ‘সিলেট সিটি নির্বাচন সামনে রেখে মাঠে নামার আগে এ ব্যাপারে আমি দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর সাথে সাক্ষাৎ করি। এসময় তারা আমাকে মাঠে কাজ করার পাশাপাশি নির্বাচনের জন্যও প্রস্তুতি নিতে বলেন। তাদের দেয়া আশ্বাসে আমি সিলেটে এসে জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় ও বৈঠক করি। বিভিন্ন এলাকায় প্রচারকাজও চালাই।’
মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, সিলেট মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক ও সাবেক সিলেট মহানগর তাঁতীদলের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবুল প্রায় কোটি টাকা ব্যয় করে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে লাঙ্গলের মনোনয়নপত্র কিনে এনেছেন। কালো টাকার এই মালিকের কাছে দলের একজন নিবেদিত প্রাণ কর্মী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন চেয়েও ব্যর্থ হলাম। আমার সঙ্গে যে অন্যায়, অবিচার করা হয়েছে সিলেটবাসী এর বিচার করবে বলে আমার বিশ্বাস।’
তিনি আরও বরেন, ‘নানা ঘটনায় বিতর্কিত বাবুল ইতোপূর্বে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৯নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হলেও বিপুল ভোটে পরাজিত হন। দলের চেয়ারম্যান এমন একজন মানুষের কাধে লাঙ্গল তুলে দিয়ে এরশাদের দ্বিতীয় দূর্গ সিলেটের নেতাকর্মীদের শুধু অবজ্ঞাই করেননি, অপমানিতও করেছেন। বিএনপি থেকে আগত নজরুল ইসলাম বাবুলকে যখন মহানগর আহ্বায়ক করা হয় তখন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা এর তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি বাবুলকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটি বিলুপ্ত করারও দাবি জানানো হয়। কিন্তু দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের সিলেটের নেতাকর্মীদের সেই দাবি না শোনে সেই বাবুলকে এখন লাঙ্গল প্রতিকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে উল্টো পুরস্কৃত করেছেন। এতে সিলেটে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের ভেতরে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।’
বিতর্কিত বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কারণে সিলেট জাতীয় পার্টির অবস্থান দুর্বল হচ্ছে উল্লেখ করে মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, সিলেটে পল্লীবন্ধু হোসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতেগড়া জাতীয় পার্টির অবস্থান আরো দৃঢ় করতে ত্যাগী নেতাকর্মীদেরকে মূল্যায়ন করতে হবে। বিশেষ করে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচন তথা মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা করতে হবে। আর এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য দলের পৃষ্টপোষক ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রীর কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবিব মইন, মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক সহসভাপতি মৌলভী আবুল কালাম দুলাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইউসফ সেলু ও মুরাদ আহমদ শাহিন, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ, সিলেট সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সিনিয়র সহসভাপতি সাদেক আহমদ সুয়েব, মহানগরীর ৮নং ওয়ার্ড জাতীয় পার্টির সহসভাপতি রহমত উল্লাহ মাস্টার প্রমুখ।